shono
Advertisement
Durga Puja 2024

পুজোয় সপ্তমীর দিন 'ইলিশ উৎসব', মাছ ভাজতেই বাড়িময় রুপোলি শস্যের ঘ্রাণ

বাবা বাজার থেকে আনত গঙ্গার ইলিশ।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:42 PM Oct 05, 2024Updated: 09:42 PM Oct 05, 2024

অঞ্জলি ঘোষ: আমার শৈশবের পুজোর স্মৃতি বলতে পঞ্চাশ থেকে ষাট দশকে উত্তর কলকাতার পুজোর স্মৃতি। তারপরেই আমি বৈবাহিক সূত্রে কলকাতা ছেড়ে চলে আসি আমার শ্বশুরবাড়ি লাল মাটির দেশ বীরভূমে। সেই থেকে পুজো বলতে শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক দুর্গাপুজো। আমার এই দীর্ঘ জীবনে প্রচুর দুর্গাপুজো এলেও ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতি আজও অমলিন। বয়সের জন্য বহু কথা ভুলে যাই কিন্তু ভুলতে পারি না ছেলেবেলার বাগবাজার সর্বজনীনের পুজোর আনন্দ।

Advertisement

আমাদের বাড়িটা বাগবাজার স্ট্রিটের উপরেই হওয়াতে পুজোর সব আনন্দ আবর্তিত হত বাগবাজার সার্বজনীনকে ঘিরেই। প্রতি বছর দুর্গাপুজো এলেই স্মৃতির বইটির পাতা উলটে ইচ্ছা জাগে ছেলেবেলার আনন্দ একটু মেখেনি। ছোটতে আমার বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যেত পুজোর মেলার মাঠে। কতবার যে যাওয়া আসা করতাম তার হিসেব নেই।

এই সুবিশাল একচালার সাবেকি প্রতিমাকে ঘিরে মাঠে মেলা বসত। আমার সর্বক্ষণের সঙ্গিনী ছিল জলি। বার বার যাওয়া মানেই বার বার খাওয়া। তবে আজকের দিনের খাবারের সঙ্গে মিলবে না। আমাদের খাবার ছিল পাতায় করে আলুর দম, গরম ঘুঘনি, কাঠি আইসক্রিম, বরফে দেওয়া ঠান্ডা পান, হজমিগুলি ইত্যাদি। এছাড়া আমাদের বাড়িতে আসত ফুলুরি, কচুরি, জিলিপি, ভেজিটেবল চপ ইত্যাদি। আমাদের বাড়িটা বাগবাজার স্ট্রিটের এমন জায়গায় ছিল যে পাশেই ছিল এক বিখ্যাত তেলেভাজার দোকান, যেটা “পটলার দোকান” নামে বিখ্যাত ছিল। সেখান থেকেই খাবার আসতেই থাকত।

পুজোয় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল বাড়ির তৈরি গজা ও দরবেশ। বাবা রান্নার ঠাকুর এনে বাড়িতে তৈরি করাতেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে হওয়াতে আমরা যত ইচ্ছা তত খেতাম। এছাড়া পুজোতে সপ্তমীর দিন ইলিশের নানান পদ হত। বাবা নিয়ে আসতেন গঙ্গার ইলিশ। শীতের ফুলকফি তখন সদ্য বাজারে আসত। মা রাঁধতেন ফুলকফি দিয়ে ইলিশের ঝোল। এবং সর্ষে-ইলিশ। ইলিশ ভাজার সময় আমরা অন্য ঘর থেকেও গন্ধ পেতাম। এছাড়া নবমীর দিনে শ্যামবাজারের বিখ্যাত দোকান “গোলঘর” থেকে পাতলা মাটির ভাড়ে আসত কষা মাংস। আমাদের খাওয়ার টেবিল চেয়ার ছিল না, আমরা মেঝেতে বসেই সবাই মিলে খেতাম রুটি, মাংস, মিষ্টি। সেই দিন দিদি ও জামাইবাবুও আমাদের সঙ্গে রাতের খাবারে যোগ দিতেন। কোন এসি-টেসির বালাই ছিল না, তখনকার উত্তর কলকাতার বাড়ি ছিল চুন-সুড়কিতে বানানো। সিলিং থেকে ঝুলত ডিসি ইলেকট্রিকে চলা এক ঢাউস ফ্যান। আর খেতে খেতে চলত পুজোর গান নিয়ে তর্ক বিতর্ক।

বাগবাজার সর্বজনীনের মাঠে পুজো উপলক্ষে গানের জলসা বা নাটক হত। সেই সময়কার নামী শিল্পীরা দর্শকদের সামনে অনুষ্ঠান করে যেতেন। তবে কোন টিকিট কাটার ব্যাপার ছিল না। সকলের জন্য খোলা থাকত। আমরা আগে থেকে গিয়ে জায়গা রাখতাম, সঙ্গে থাকত ঠোঙা ভরতি বাদাম ভাজা। তবে পুজোতে এত কিছু খেলেও যেদিন এই বিশাল প্রতিমা রাস্তা আলো করে গঙ্গাতে নিরঞ্জনের পথে চলে যেত, সেদিন চোখের জল বাঁধ মানত না। রাতে খেতে পারতাম না। আজ এত বছর পরেও ভাবতে গিয়েই চোখ ভরে ওঠে জলে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এই সুবিশাল একচালার সাবেকি প্রতিমাকে ঘিরে মাঠে মেলা বসত। আমার সর্বক্ষণের সঙ্গিনী ছিল জলি।
  • বার বার যাওয়া মানেই বার বার খাওয়া। তবে আজকের দিনের খাবারের সঙ্গে মিলবে না।
Advertisement