অনির্বাণ মণ্ডল: ক্রিসমাসের আসল মানে যেমন যিশুর জন্মদিন পালন করা নয় তেমনই দুর্গাপূজাও কেবল ধর্মীয় উদযাপনেই আবদ্ধ নয়। ক্রিসমাস আসলে পরিবার ও বৃহত্তর পরিবারের একটি ছাদের নীচে আসা। এই একটা দিন সবাই এক টেবিলে বসে লাঞ্চ খেতে খেতে সারা বছরটাকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেঁধে ফেলে আড্ডা গল্পের মাধ্যমে। দুর্গাপূজাও তেমনই সমাজ ও পরিবারের মেলবন্ধন। আমাদের ব্যস্ত জীবনের মাঝে সব ভুলে গিয়ে হাসিআনন্দে কাটিয়ে দেওয়া কটা দিন ও মন উজাড় করা আন্তরিকতা। এসেক্সের এই দুর্গাপূজা(Probashe Durga Puja 2024) ঠিক এই অনুভূতির ধারক ও বাহক। এ পুজোর আন্তরিকতা পাঁচদিন সময়ব্যাপী হলেও আত্মিকভাবে সদানন্দে বিরাজমান।
ইংল্যান্ডের শহরতলি গিডিয়া পার্ক ক্রিকেট ক্লাব এসেক্সের এই পুজো এবার পা দিল ৯ বছরে। অন্যবারের মতোই এবারও একই রকম উদ্দীপনা। প্রতিমা নির্মাণ করেছেন বিখ্যাত মোহনবাঁশী রুদ্রপাল ঘরানার মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্রপাল। আর জি কর কাণ্ডের কথা মাথায় রেখে থাকছে 'জাস্টিস ফর অভয়া' ব্যাজ। এবারের পুজোর থিম 'উই ডিমান্ড জাস্টিস'। যে থিমের স্লোগান- 'পুজো হবে আচার মেনে উৎসব হবে বিচার পেলে।'
ক্লাবের সবুজের সমারোহে অভিনব মণ্ডপসজ্জা নজর কাড়বেই। দেওয়ালে দেওয়ালে নিউ মার্কেট, হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর- মনে হবে আপনি কলকাতায় আছেন। তার সঙ্গে থাকছে কালীঘাটের পটুয়াশিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি। যা এক সহজ অথচ গভীর স্হাপত্যের নিদর্শন।
পুজো কমিটির লক্ষ্য পুজোর সারমর্ম উত্তরসূরিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এখানকার কচিকাঁচারা পিছনের বেঞ্চে বসে ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক করে না। তারা বরং মাটিতে বাবু হয়ে বসে মন দিয়ে শোনে পুরোহিতের কথা। হৃদয়ে গেঁথে নেয় প্রাণপ্রতিষ্ঠা, বোধন, পুষ্পাঞ্জলি, আরতি ও বিসর্জনের ইতিকথা। এদিকে প্রতিটা দিনই দুপুর ও রাতে থাকছে খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত। কমিটির সদস্যরা নিজের হাতে রান্না ও পরিবেশন করে। প্রতি বছরই তা জিতে নেয় বাঙালি-অবাঙালি-সাহেব-মেমসাহেব সকলের হৃদয়।