চারুবাক: নিজের দ্বিতীয় ছবিতেই ইন্দ্রাশিস আচার্য প্রমাণ করে দিলেন সিনেমা মাধ্যমটি তাঁর জবরদস্ত দখলে। বিশেষ করে চেম্বার ফিল্ম বানানোয়। তাঁর নতুন ছবি ‘পিউপা’ প্রায় প্রচারের আলো ছাড়াই মুক্তি পেল। কিন্তু গুটিপোকা তো আসলে প্রজাপতির সুপ্ত রূপ। ইন্দ্রাশিসের ছবিতে প্রজাপতির বাহারি রং আছে। সেই রং দেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে একবার হলমুখো হতে হবে। ‘পিউপা’য় লুকনো বাহারি রঙে সুখের চাইতে দুঃখটাই বেশি। স্বপ্নের চাইতে স্বপ্নভঙ্গের নীরব আর্তির পাশাপাশি রয়েছে জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার বাইরেও উন্মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে ও জড়িয়ে দেওয়ার অনাবিল আনন্দ ও অনুভূতির কথাও। ইন্দ্রাশিসের চিত্রনাট্যে চারজন মানুষের নিজস্ব সমস্যা ও দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়া আছে সমসাময়িক সময়ের রাজনীতি এবং সমস্যাও। পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতার সঙ্গে তিনি মিলিয়ে দিতে পেরেছেন পার্থিব ও জাগতিক সমস্যাও।
[নিকের সঙ্গেই বাগদান পর্ব সারলেন প্রিয়াঙ্কা, অক্টোবরেই বিয়ে!]
মায়ের মৃত্যুতে আমেরিকা থেকে এসে পড়ে শুভ্র। বাবার অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া তাঁকে আটকে রাখে বাড়িতেই। অথচ কাজের জগতেও চলছে সমস্যা। বোন মউ জাঁদরেল ডাক্তার স্বামীর চাপে অস্বস্তিতে। অসুস্থ বাবাকে সেবা করতে চাইলেও স্বামীর দাপটে সেও জর্জরিত। শুভ্রর প্রেমিকা বর্ষা আমেরিকায় পড়াশোনার জন্য যেতে চায়। থাকতে চায় প্রেমিকের সঙ্গেই। অথচ সেখানেও রয়েছে বাধা। আর আছেন খানিকটা বিবেকের ভূমিকায় পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কাকা রজতবাবু। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, মুক্তমনা মানুষ, প্রকৃতির পূজারি বলা যেতে পারে। এই মানুষটিই ‘পিউপা’ ছবির মুখ্য চরিত্র। চারটি চরিত্র গুটিপোকার খোলসের মধ্যে সুন্দর সহাবস্থান করেছে। একের সঙ্গে অপরের সম্পর্কগুলি বিশ্লেষণ করায় ছোট ছোট সুন্দর এবং মানবিক বেশ কিছু মুহূর্ত তৈরি করেছেন পরিচালক। উচ্চবিত্ত পরিবারের পরিবেশটিও ছবিতে বেশ সুন্দর, পরিপাটি বিশ্বস্তভাবেই তৈরি। নাটকীয়তা থাকলেও তা বাস্তব বর্জিত নয়। স্বাভাবিক ও চলমান জীবনের ছবি ‘পিউপা’। দৃশ্যগুলি সাজানো ও দৃশ্যান্তর পর্বগুলিও বহু জায়গাতেই রিয়েল টাইমকে মেইনটেন করেও সময়াতীত একটা ইশারা রেখে যায়। দর্শকের মনে হতেই পারে ‘পিউপা’ সময়-কাল পেরনো একটা ছবি। ইন্দ্রাশিসের প্রয়োগ প্রকরণের নৈর্ব্যক্তিক অ্যাটিটিউড ছবির গায়ে আলতোভাবে নান্দনিক সৌন্দর্যের একটি পোশাক জড়িয়ে দিয়েছে। দর্শকের অনুভূতিতে সেটি নাড়া দেবে।
[‘সঞ্জু’তে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, নির্মাতাদের আইনি নোটিস আবু সালেমের]
এমন মানবিক ও পেলব ভাবনায় তৈরি ছবিতে অভিনেতারা প্রত্যেকেই সাফল্যের সমান দাবিদার। সুদীপ্তা চক্রবর্তী আবারও প্রমাণ করে দিলেন মউ হয়ে ওঠায় তাঁর ‘দ্বিতীয়’ কেউ নেই। দুই সংসারের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁর মানসিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ অতুলনীয়। রাহুল হয়েছেন শুভ্র। বাস্তবানুগ অভিনয় তাঁর। রজতের চরিত্রে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বিবেকের কাজটি যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গেই করেছেন। পিয়ালি মুন্সির বর্ষাও স্বল্প সুযোগে দর্শকের চোখে পড়বে।
কিন্তু লাখটাকার প্রশ্নটা হল ক’জন দর্শক হলে যাবেন? প্রচারহীন ‘পিউপা’র একমাত্র ভরসা কিন্তু মুখের প্রচার। ভাল বাংলা সিনেমার দর্শক কলকাতায় আছে এমন গর্ব তো আমরা করি। দেখা যাক ‘পিউপা’ প্রজাপতি হয়ে উঠতে পারে কি না!
[জীবন সায়াহ্নে এসে সত্যান্বেষণে আদৌ সফল হলেন কি বৃদ্ধ ব্যোমকেশ?]
The post দর্শকের দরবারে কি প্রজাপতি হয়ে উঠতে পারল ইন্দ্রাশিসের ‘পিউপা’? appeared first on Sangbad Pratidin.