shono
Advertisement
Marathon

বাংলার বুকে ইতিহাস! ম্যারাথনে রাত জাগল বদলে যাওয়া অযোধ্যা পাহাড়

শনিবার ভর সন্ধ্যা থেকে প্রায় মধ্যরাত ম্যারাথন জ্বরে কাঁপল অযোধ্যা পাহাড়।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 09:39 PM Feb 22, 2025Updated: 09:46 PM Feb 22, 2025

সুমিত বিশ্বাস, অযোধ্যা পাহাড় (পুরুলিয়া): এ যেন অযোধ্যা পাহাড়ে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের কাহিনী! পাহাড়, জঙ্গল, রাত আর ম্যারাথন। রঙিন অযোধ্যা পাহাড়। শনিবার পুরুলিয়ার বনমহল অযোধ্যা পাহাড়কে এই রূপেই দেখল বাংলা। রাজ্যে যে এই প্রথম নাইট ম্যারাথন। তাও আবার পাহাড়ে। আর এমন অ্যাডভেঞ্চারের প্রচারে যে শামিল হয়েছিল টলিউড। সেইসঙ্গে খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদ থেকে রাজ্যের পুলিশ কর্তারা। আর তাই জেনারেল ও মহিলা ক্যাটাগরি মিলিয়ে পাহাড়ি পথে দৌড়লেন জঙ্গলমহল, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, কলকাতা ও ভিনরাজ্য মিলিয়ে হাজারের বেশি প্রতিযোগী। যেখানে সাধারণ তরুণ-তরুণী থেকে অ্যাথলিট, পুলিশ কর্তারা। দৌড়লেন স্বয়ং এডিজি (পশ্চিমাঞ্চল) অশোককুমার প্রসাদ, এডিজি (এসটিএফ)বিনীত গোয়েল। হাজির ছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সুনীল চৌধুরী, আইজি (বাঁকুড়া) সিসরাম ঝাঝোরিয়া-সহ জঙ্গলমহলের জেলাগুলির পুলিশ সুপাররা। জেনারেল ক্যাটাগরিতে প্রথম উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের বিকাশ প্যাটেল। মেয়েদের মধ্যে প্রথম উত্তর ২৪ পরগনার মসলন্দপুরের শম্পা গায়েন।

Advertisement

রাজ্যের পুলিশকর্তা বিনীত গোয়েলের হাতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে ম্যারাথনের সূচনা হয়। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

পাহাড়-জঙ্গলের বুক চিরে যে ঝলমলে আলো। সেই সঙ্গে ঘন জঙ্গলে আলো-আঁধারি পথে ক্যাম্প ফায়ার। আর তার পাশেই ধামসা-মাদল। সেই সঙ্গে লোকশিল্প ছৌ, নাটুয়া, পাতা নাচ, ঝুমুর আর বাউল। সবে মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জন লোকশিল্পী। ওয়ার্ম আপের আগে জুম্বা ড্যান্স সেইসঙ্গে যোগা। আর ঠাসা পর্যটক সহ জঙ্গলমহল, কলকাতা ও মুম্বইয়ের গায়ক-গায়িকারা। এমন জমকালো ছবি এর আগে দেখেনি অযোধ্যা পাহাড়। বাংলার প্রথম সারির পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম হওয়ার পরেও। শনিবার ভর সন্ধ্যা থেকে প্রায় মধ্যরাত ম্যারাথন জ্বরে কাঁপল অযোধ্যা পাহাড়। সৌজন্যে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের টিম ওয়ার্ক। আর তাতে শামিল অযোধ্যা পাহাড়ের পর্যটন সংস্থা থেকে আদিবাসী-মূলবাসীর মানুষজন। তাই এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে আধুনিকতার মিশেলে ছিল ধরতি আবা ভগবান বিরসা মুন্ডাকে স্মরণ করে আদিবাসী ঐতিহ্য, পরম্পরাও। তাই মূল সঞ্চালকের সঙ্গে ছিলেন শিবরাম কিসকু ও বিকাশ মাহাতো।

ভর সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত ম্যারাথন জ্বরে কাঁপল অযোধ্যা পাহাড়। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

এই টিম ওয়ার্কেই যে আজ থেকে ১৫ বছর আগে অযোধ্যা পাহাড় মাওবাদী মুক্ত হয়েছিল। তাই পাহাড় এমন রঙিন। রাতেও আলোয় ঝলমল। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "জঙ্গলমহল যে আক্ষরিক অর্থেই হাসছে এই নাইট ম্যারাথন আরও একবার প্রমাণ করল। এই ম্যারাথনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা অভিভূত।" তাই ম্যারাথনে অংশ নেওয়া কলকাতার মানিকতলার অনুপকুমার চক্রবর্তী, বান্দোয়ানের কেন্দাপাড়ার নেহা প্রামানিকদের বক্তব্য, "ম্যারাথন ও বহু দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু পাহাড়-জঙ্গলের বুক চিরে এমন নাইট ম্যারাথনের অভিজ্ঞতা কখনোই ভুলবো না। এ এক আলাদা রোমাঞ্চ।"

এদিন রাজ্যের পুলিশ কর্তা বিনীত গোয়েলের হাত দিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে এই ম্যারাথনের সূচনা হয়। সঙ্গে চোখধাঁধানো আতসবাজি প্রমাণ করে দেয় বদলে যাওয়া অযোধ্যা। তাই পুলিশের ম্যারাথনে অগ্রণী নাম পুলিশ কর্তা অশোককুমার প্রসাদ বলেন, "এই ম্যারাথনকে বছর বছর আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।" এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, প্রাক্তন ফুটবলার দিব্যেন্দু বিশ্বাস, অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামানিকের মতো ক্রীড়াক্ষেত্রের তারকারা।শনিবার রাতে এই ম্যারাথনের ফ্ল্যাগ অফ হয় অতিথিদের হাত ধরেই।

এডিজি (এসটিএফ) বিনীত গোয়েল বলেন, "একসময় আমি এখানকার এসপি ছিলাম। মাওবাদী দমনে পশ্চিমবঙ্গ মডেল। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ যা পারেনি তা করে দেখিয়েছে রাজ্যের পুলিশ।" আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সুনীল চৌধুরীর কথায়, "আমিও এই জেলার পুলিশ সুপার ছিলাম। আগে পুলিশ ছাড়া এই পাহাড়ে কেউ ঢুকতে পারত না। এই জেলায় মাওবাদী দমনে আমার সঙ্গে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় কাজ করেছেন। আজ বদলে যাওয়া অযোধ্যা পাহাড় রাজ্য পুলিশের জন্য। এটা আমাদের কাছে গৌরবের।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement