সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনকে নজরে রেখে শুক্রবার মধ্যরাতে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসে কোয়াড গোষ্ঠী। ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া মিলে তৈরি এই চতুর্দেশীয় অক্ষ আলোচনায় উঠে আসে চিন, করোনা থেকে শুরু করে আফগানিস্তান (Afghanistan) ইস্যু। কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলির মতো বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক, ‘নতুন অধ্যায় শুরু’, মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের]
চিনকে চাপে রাখতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দুই বন্ধু রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার প্রায় চব্বিশ ঘন্টা পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পৌরহিত্যে ‘সাদা বাড়ি’র সজ্জিত কক্ষে কোয়াড গোষ্ঠীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রয়টার্স সূত্রে খবর, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে উন্মুক্ত রাখা তথা নৌ-চালনার ‘স্বাধীনতা’ বজায় রাখার উপর জোর দেয় সদস্য দেশগুলি। অর্থাৎ, ওই অঞ্চলে চিনের (China) ‘দাদাগিরি’ রুখে দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে চারটি দেশ।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, কোয়াডের মঞ্চ থেকে তালিবানের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছে আমেরিকা ও ভারত। আফগানভূমে সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে দুই দেশ। সরাসরি, পাকিস্তানের নাম না করে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ায় ইসলামাবাদের ভূমিকা নিয়ে সরব হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে, বাইডেনকে ভারতে আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন নমো। উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান তিনিও ভারত সফরের জন্য অত্যন্ত উৎসাহী।
এদিকে, কৌশলগত বিষয় ছাড়াও করোনা মহামারী নিয়েও আলোচনা করে কোয়াড অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি। জানা গিয়েছে, কোয়াড ভ্যাকসিন পার্টনারশিপ প্রকল্পের অন্তর্গত জনসন ও জনসনের ৮০ লক্ষ টিকা দেবে ভারত। অক্টোবরের শেষে ভারতে তৈরি জনসনের টিকার জোগান শুরু হয়ে যাবে। একইসঙ্গে, কোয়াড দেশগুলির মধ্যে অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জাপান ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত সহজ করার জন্য পারস্পরিকভাবে মান্যটা দিয়ে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট চালু করার কথাও বলেণ মোদি। পাশাপাশি, ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের কর্মীদের কথা মাথায় রেখে আমেরিকার H1B ভিসার প্রক্রিয়া সহজ করার আবেদন জানিয়েছেন নমো। সবমিলিয়ে, কোয়াড বৈঠকে নজের অবস্থান স্পষ্ট করে আমেরিকার সঙ্গে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছে ভারত।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তান থেকে ফৌজ সরানোয় আমেরিকার উপর নির্ভরতার দিন যে শেষ সেই কথা বুঝতে পেরেছে ভারত-সহ অন্য দেশগুলি। ন্যাটো যে বর্তমানে ‘বৃদ্ধ সিংহ’, এবং আমেরিকাও এই মিত্রজোট নিয়ে গা করছে না তা অনেকটাই স্পষ্ট ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কাছে। তবে আফগান লড়াই শেষ হওয়ায় এবার চিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে আমেরিকা। আর সে কারণেই এক দিকে কোয়াড, অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন যুদ্ধ প্রযুক্তির অক্ষ তৈরি করছে আমেরিকা।
তবে ভারতের বিদেশমন্ত্রক সূত্রের মতে, চিনকে চাপে রাখা ভারতেরও লক্ষ্য। কিন্তু তা নিজের নীতি ও আঞ্চলিক অবস্থান বুঝে করতে চায় নয়াদিল্লি। কারণ ভারতের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা একটি দেশ চিন। ভূকৌশলগত কারণে আমেরিকার কাছে চিন ততটা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ নয়। আর তাই চিন নীতির প্রশ্নে আমেরিকার চেয়ে কাছের অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভিয়েতনামের মতো পূর্ব এশিয়ার ছোট ছোট দেশগুলির সঙ্গে অক্ষ তৈরি হলে তা বিপদে অনেক বেশি কাজে আসবে ভারতের। তবে যুদ্ধের পরিস্থিটি এই দেশগুলি কতটা পাশে দাঁড়াবে তা সময়ই বলবে।