সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মনিরুল ইসলামের পর অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। নয়া যোগদান ঘিরে ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বঙ্গ বিজেপি। বুধবার রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তরে সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান নয়ের দশকের বিখ্যাত অভিনেত্রী। কিন্তু তাঁর যোগদান ঘিরে তৈরি হয়েছে তুমুল বিতর্ক। তিনি আদৌ ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি নাগরিক তাই নিয়েই যত বিতর্ক। উইকিপিডিয়া বলছে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। এমনকি বাংলাদেশের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ তাঁর মাতৃভূমি। সাংবাদিকের ভুল শুধরে দিয়ে তিনি জানান, ‘আমার জন্ম কিন্তু চট্টগ্রামে নয়, ফরিদপুরে। তবে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।’ যদিও বিজেপিতে যোগ দিয়ে অঞ্জু ঘোষের দাবি, ১৯৬৬ সালে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে কলকাতা পুরসভা কর্তৃক প্রকাশিত একটি জন্ম শংসাপত্র পেশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, ২০০৩ সালে সেই শংসাপত্র প্রকাশিত।
এবার প্রশ্ন উঠছে, যাঁর ১৯৬৬ সালে জন্ম তাঁর বার্থ সার্টিফিকেট ২০০৩ সালে প্রকাশিত হল কেন? শুধু তাই নয়, বিজেপির তরফ থেকে বার্থ সার্টিফিকেট ছাড়াও অঞ্জু ঘোষের ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড ও পাসপোর্টের নথি দেখিয়ে দাবি করা হয় তিনি ভারতীয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাঁর প্যান কার্ডের সঙ্গে বার্থ সার্টিফিকেট এবং উইকিপিডিয়ার তথ্য মিলছে না। যদিও উইকিপিডিয়ায় তথ্য এডিট করা যায় তাই তা প্রমান্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, অনলাইনে অঞ্জুর জন্মের শংসাপত্রের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সঙ্গে কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলছে না। একই নামে দু’টি রেজিস্ট্রেশনও পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ। অঞ্জুর যে পাসপোর্ট দেখানো হয়েছে, সেটির মেয়াদ শুরুর তারিখ ২০১৮ সালে। যিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ এবং ভারতে অভিনয় করেছেন, তাঁর পাসপোর্ট ২০১৮ সালের হয় কী করে? বিজেপির দাবি, এটি তাঁর পুনর্নবীকৃত পাসপোর্ট। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তাঁর প্রথম পাসপোর্টের তথ্য কোথায়? যদি তিনি পরে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে থাকেন, তা হলে কলকাতার জন্মের শংসাপত্র আসে কোথা থেকে?
[আরও পড়ুন: অঞ্জু ঘোষ ভারতীয়ই, বার্থ সার্টিফিকেট প্রকাশ করে দাবি বিজেপির]
বিজেপি তাঁর যে ভোটার কার্ড পেশ করেছে, সেটি ইস্যু হয়েছে ২০০২ সালে। ভারতের নাগরিক হলে অঞ্জুর এতদিন লাগল কেন ভোটার কার্ড পেতে। প্যান কার্ডের তথ্যেও গোলমাল রয়েছে। সেখানে তাঁর জন্মসাল লেখা রয়েছে ১৯৬৭। এক এক জায়গায় এক এক রকম জন্মতথ্য। বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, অঞ্জু ঘোষ ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনের সূত্রেও জানা গিয়েছে, বাংলাদেশি নায়িকার ভারতীয় নাগরিকত্বের বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই। এর আগে লোকসভা নির্বাচনে বাংলাদেশের অভিনেতাদের প্রচারে ব্যবহার করেছিল তৃণমূল। তা নিয়ে উত্তাল হয় রাজ্য তথা দেশের রাজনীতি। ফিরদৌস ও গাজি আবদুন নূরের ভিসা বাতিল করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এবার বাংলাদেশি অভিনেত্রীকে দলে নিয়ে বিতর্কে বিজেপি। তৃণমূলের তরফে কটাক্ষ করে বিজেপিকে আন্তর্জাতিক দলের আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে এর বিরোধিতা করেছেন। তবে দিলীপ ঘোষের দাবি, উনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অভিনয় করলেও পরে দেশে ফিরে আসেন এবং ভোটার কার্ড নেন। এতে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না তিনি।
[আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিলেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ]
The post আদৌ কি ভারতীয় অঞ্জু ঘোষ, একাধিক নথিতে নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক appeared first on Sangbad Pratidin.