রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রাজ্য বিজেপি অফিসেই ‘গৃহহীন’ হয়ে গেলেন দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহা (Rahul Sinha)। বিতর্ক মাথায় নিয়েই পুরনো আর আদি নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও নানা প্রশ্নের মধ্যেই বিতর্ক নিয়েই গত বৃহস্পতিবার থেকেই মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য দপ্তর ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিল। আর শনিবার ভেঙে দেওয়া হল প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার ঘর। ভাঙার পথে দিলীপ ঘোষের ঘরও। আর এই গোটা ঘটনায় অভিমানী দলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দিলীপের কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে কোনও বিশেষ কথা বলেনি। ভাঙার সিদ্ধান্তটা আগে জানানো উচিত ছিল।’’ আর আরেক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহাও যে ভিতরে যথেষ্ঠ ক্ষুব্ধ তা তাঁর মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখন এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’ শনিবার মুরলী ধর সেন লেনের দপ্তরে এসে একত্রে জড়ো করে রাখা ভাঙা ঘরের জিনিসপত্র টপকে উপরে না গিয়ে নিচের কমন রুম বা মিডিয়া রুমেই বসেন রাহুল। সেখানেই দলের কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
[আরও পড়ুন: নতুন সংসদ ভবন আসলে মোদি মাল্টিপ্লেক্স! জয়রাম রমেশের খোঁচা ঘিরে শোরগোল]
দলের মধ্যে প্রশ্ন, এই মুহূর্তে পার্টির কোনও শীর্ষ পদে না থাকার কারণেই কি দিলীপ (Dilip Ghosh) ও রাহুলকে ঘর ছাড়া করা হল? রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘আমার ঘরও থাকছে না। কল সেন্টার হবে।’’ দলের একাংশের প্রশ্ন, সল্টলেকের নয়া দপ্তরে তাহলে দিলীপ বা রাহুল সিনহার জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ করা হয়নি কেন? বঙ্গ বিজেপিতে (BJP) এখনও পর্যন্ত দিলীপবাবুর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। রাহুল সিনহার প্রভাবও রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, সংস্কারের নাম করে এভাবে মুরলীধর সেন লেন থেকে দুই নেতাকে ঘরছাড়া করে তাদের ঘুরপথে অপমানই করা হল। মুরলীধর সেন লেনের দু’টি বিল্ডিংয়ের কোথাও এই দুই নেতার ঘর রেখেই বাকি জায়গাজুড়ে কল সেন্টার করা যেতেই পারত।
[আরও পড়ুন: নতুন সংসদ ভবন আসলে মোদি মাল্টিপ্লেক্স! জয়রাম রমেশের খোঁচা ঘিরে শোরগোল]
দিলাীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আমাকে অফিস সম্পাদক বললেন এখানে কল সেন্টার হবে। কমন রুমে বসতে পারেন। আমি তো কোনও পার্টির পদাধিকারী নই। তাই আলাদা চেম্বারও থাকবে না শুনেছি। আমি মাঝে মধ্যে পার্টি অফিসে যাই পুরনো কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে। এটা যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানানোর দরকার ছিল।’’ প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে দিলীপবাবু নিজের ঘরে এসে দেখেছিলেন, তাঁকে না জানিয়েই এসির সংযোগ খুলে দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার পিছনেও বঙ্গ বিজেপির আভ্যন্তরীন কোন্দল রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতক মহলের একাংশ। জানা গিয়েছে, গোটা অফিসে নাকি ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের আইটি-র কাজ হবে। গেরুয়া শিবিরের অন্দরে প্রশ্ন, সেজন্য কর্মীদের আবেগ যে অফিসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, যে অফিস অনেক ঘটনার সাক্ষী, তা ভাঙতে হবে কেন? রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে এই প্রশ্ন তুলে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে দলের বড় অংশই। যে পার্টি অফিসে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এসেছেন, এই অফিসের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। অথচ সেই মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসের তকমাটাই মুছে দিল বঙ্গ বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন শিবির।