শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে বঙ্গ রাজনীতিতে।ভোটের নির্ঘন্ট না জানলেও সব শিবিরেই চলছে জোর প্রস্তুতি। একই ভাবে প্রস্তুতি চলছে ভোটকর্মীদের অন্দরেও। ভোটের সময় আসলেই ভোটকর্মীদের কাজের দায়িত্ব বাড়ে। কিন্তু সেই দায়িত্ব অনেক ভোটকর্মী এড়িয়ে যেতে চান। ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজেদের নাম কাটাতে। এই অবস্থায় বেনজির ঘটনা ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর কর্ণজোড়ায়। ভোটকর্মীর পদে স্বেচ্ছায় কাজ পেতে জেলাশাসকের দপ্তরে হাজির শিক্ষিকা মধুমিতা রায় অধিকারী।
রায়গঞ্জের মিলনপাড়ায় যোগেন্দ্রচন্দ্র মল্লিক অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত মধুমিতা। হেমতাবাদ বিধানসভার অন্তর্গত ভাটোল এলাকার বাসিন্দা তিনি। ২০০৯ সাল থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ। তবে ২০১৯ সালে তাঁর জীবনে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। ওই বছরের অক্টোবরে নিজের একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছেন মা মধুমিতা। মাত্র উনিশ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে কলকাতার আশুতোষ কলেজের বিজ্ঞান শাখার ওই ছাত্রের।
[আরও পড়ুন: টানা দু’দিন বাড়ল রাজ্যের দৈনিক করোনা সংক্রমণ, চব্বিশ ঘণ্টায় কোভিডের বলি ৩]
সেই যন্ত্রণা মনের মধ্যে নিয়েই কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে চান শিক্ষিকা মধুমিতা। আর তাই ভোটকর্মীর কাজ চাইতে সটান চলে আসেন কর্ণজোড়ায় জেলাশাসকের দপ্তরে। যদিও বুধবার জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা কলকাতায় ছিলেন। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি মধুমিতার। কিন্তু কাজ করতে অনড় মধুমিতা শেষপর্যন্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক অলঙ্কৃতা পাণ্ডের সঙ্গে দেখা করেন। ভোটের কাজে স্বেচ্ছাকর্মী হিসাবে আবেদন জানিয়েছেন। এদিন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসকের দপ্তরে দাঁড়িয়ে মধুমিতা রায় অধিকারী জানিয়েছেন, তিনি ভোটে কাজ করতে চান। সেই আবেদন জানাতেই অতিরিক্ত জেলাশাসকের দপ্তরে উপস্থিত হয়েছিলেন।নির্বাচন দপ্তরে আধিকারকদেরকে সঙ্গে দেখা করে এসে মধুমিতা জানিয়েছেন, প্রথম পর্বে চিঠি না আসলেও দ্বিতীয় পর্বে ভোটের ডিউটির চিঠি আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আধিকারিকরা।
এই প্রসঙ্গে, অতিরিক্ত জেলাশাসক অলঙ্কৃতা পাণ্ডে জানিয়েছেন, “ভোটের কাজ করতে চেয়ে আবেদনের ঘটনা বেনজির। ভাল খবর। অনেকে ডিউটি করতে চান না। সেখানে একজন শিক্ষিকা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোটের কাজে এগিয়ে এসেছেন, এটা খুব ভাল বিষয়।” উল্লেখ্য, উত্তর দিনাজপুর জেলায় এবার ৩০৭৬টি বুথের মধ্যে ৩৯১টি বুথ, মহিলা বুথ হিসাবে তৈরি করা হবে। যা সম্পূর্ণ মহিলা ভোট কর্মীরাই পরিচালনা করবেন।