সুব্রত বিশ্বাস: স্ট্র্যান্ড রোডে রেলের সদর দপ্তরের আগুন নিভেছে। তবে ক্রমাগত মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্যনতুন বিতর্ক। কখনও প্রশ্ন উঠছে, দমকলকর্মীরা লিফট ব্যবহার করলেন কেন? তো কখনও আবার রেলের সদর দপ্তরের মানচিত্র না থাকারও অভিযোগ উঠছে। তবে সেই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করল রেল (Rail) এবং দমকল। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তার জবাব দিলেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং পূর্ব রেলের এজিএম।
মুখ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করেছিলেন, নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের মানচিত্র পাওয়া গেলে আরও আগে আগুন নেভানো যেত। রেলের কাছে মানচিত্র চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন মমতা। একইসঙ্গে সেখানে রেলের আধিকারিকদের অনুপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। তবে মঙ্গলবার তাঁর সেই সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রী। টুইট করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, রেলের পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন। রেলের জেনারেল ম্যানেজার-সহ একাধিক কর্তারা রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন বলেও দাবি করেন তিনি। উল্লেখ্য, সেই সময় গোটা বিল্ডিংয়ে ৪০০ জন রেলকর্মী ছিলেন।
[আরও পড়ুন : পামেলার গাড়িতে রাখতে মাদক কিনেছিল এক লাস্যময়ী! পুলিশের জালে রাকেশ ঘনিষ্ঠ যুবতী]
এদিকে পূর্ব রেলের এজিএম অনিত দৌলত মুখ্যমন্ত্রীর আনা অভিযোগ নস্যাৎ করে বলেন, “জয়েন্ট সেক্রেটারি পর্যায়ের কমিটি তদন্ত করবে। ফলে তারা নিশ্চয়ই বিল্ডিংয়ের নকশা দেখবেন। সেই নকশা আছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, “বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যে কলকাতা পুলিশ ও দমকলকে খবর দেওয়া হয়েছে, যার রেকর্ড সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রয়েছে। ফলে গাফিলতির কোনও কারণ নেই।” বিল্ডিংয়ে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “আগুনের সঙ্গে লড়াই করার মতো ব্যবস্থা কোনও বিল্ডিংয়ে থাকে না। তবে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসাবে যা রাখার দরকার, তার সবটাই সক্রিয় ছিল। ব্যবহারও হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আগুন বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে দমকল ডাকা হয়।কাজ করতে গিয়ে মারা যান রেলকর্মীরা।” রেল আধিকারিকরা কয়লাঘাট আসেননি বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয় বলে এজিএম জানান। বলেন, “আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ছিলাম সব সময়।পরে পুলিশের বাধায় উপরে উঠতে পারিনি।” তিনি আরও জানিয়েছেন, তদন্তে কোনও দপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতি প্রমাণিত হলে, সেই দপ্তরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন : প্রথম দু’দফায় প্রতি বুথে ৬-৮ জন কেন্দ্রীয় বাহিনী, বাইরে থাকবে রাজ্য পুলিশ! ইঙ্গিত কমিশনের]
এদিকে দমকলকর্মীরা কেন লিফট ব্যবহার করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ প্রসঙ্গে দমকলের সাফাই, বহুতলের ১৩ তলায় সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। অন্ধকার ও ধোঁয়ার সঙ্গে লড়াই করে ১২ তলায় পৌঁছতে হলে আগেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন দমকলকর্মীরা। তাই ফায়ার লিফটার হিসেবে লিফটটিকে ব্যবহার করা হচ্ছিল। কথা ছিল দমকলকর্মীরা ১০ তলায় নেমে যাবেন। কিন্তু ভুলবশত ১২ তলার সুইচ টিপেছিলেন তাঁরা। তাই ওই কর্মীরা সরাসরি ১২ তলায় পৌঁছে যান। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘটনাস্থলেই দমবন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়।