অর্ণব দাস, বারাসত: প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের খোঁজে ক্রেতা সেজে যেতেই দুষ্প্রাপ্য প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর সংগ্রহ দেখে চোখ কপালে পুলিশের! বারাসতের দেগঙ্গার একটি বাড়ি থেকে এমন ঐতিহাসিক ভাণ্ডারের আনুমানিক মূল্য ১০০কোটি টাকারও বেশি। শুক্রবার দেগঙ্গা (Denganga) থানার বেড়াচাঁপার এলাকার এই ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে। যাঁর বাড়ি থেকে জিনিসগুলি উদ্ধার হয়েছে, সে স্বেচ্ছায় জিনিসগুলি হস্তান্তর করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা রুজু করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কুষাণ সাম্রাজ্য থেকে মৌর্য সাম্রাজ্য (Mourya Dynasty) – এই সময়কালের মধ্যে দুষ্প্রাপ্য (Rare artefacts) জিনিস রয়েছে দেগঙ্গা থানার বেড়াচাঁপার চন্দ্রকেতুগড় এলাকায়। ট্রাস্টি বোর্ড নতুন মিউজিয়াম তৈরির পরিকল্পনা নেওয়ার পর থেকেই প্রত্নতাত্ত্বিক দুষ্প্রাপ্য জিনিসের খোঁজ শুরু করেছিলেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল তথা অফিসিয়াল ট্রাস্টি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল বিপ্লব রায়। সেই সময়ই তিনি বেড়াচাপার চন্দ্রকেতুগড়েও খোঁজ করেন। তখনই জানা যায়, হাদিপুরের বাসিন্দা আসাদুজ্জামানের বাড়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন প্রত্নতাত্বিক জিনিস।
[আরও পড়ুন: তারকেশ্বর কলেজে পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানের ছেলের আইবুড়ো ভাত, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা]
এরপরই সেই জিনিসগুলি উদ্ধার করতে আসাদুজ্জামানের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো শুরু হয়। এরপর শুক্রবার সকালে বিপ্লববাবু নিজেকে দিল্লির বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়ে আসাদুজ্জামানকে ফোন করে বলেন, তিনি দুষ্প্রাপ্য জিনিস সংগ্রহ করেন। গঙ্গাসাগরের জন্য কলকাতায় এসেছেন। আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাচীন জিনিস কিনতে চান। রাজি হওয়ার পর এদিন দুপুরে আসাদুজ্জামানের বাড়িতে যান বিপ্লববাবু। প্রাচীন এই প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসগুলি আসাদুজ্জানের দোতলার তিনটি ঘরে রাখা ছিল। কেনার টোপে রাজি হয়ে আসাদুজ্জামান তার গোডাউনে মজুত রাখা সব জিনিস দেখতে শুরু করেন।
[আরও পড়ুন: ‘মোদি ভগবান, একবার ছুঁতে চাই’, আর্তি মোদিকে মালা পরাতে গিয়ে বিতর্কে জড়ানো কিশোরের]
পরিকল্পনা মাফিক সময়মত দেগঙ্গা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এরপরই জিনিসগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এ বিষয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল তথা অফিসিয়াল ট্রাস্টি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল বিপ্লব রায় বলেন, “আসাদুজ্জামানের কাছে ১৫ হাজারেরও বেশি দুষ্প্রাপ্য জিনিস ছিল যা চন্দ্রকেতুগড় থেকে উদ্ধার করা। তার মধ্যে কমবেশি ১৫টি জিনিসের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ বেঙ্গলি সার্টিফিকেট রয়েছে। বাকিগুলির সার্টিফিকেট নেই। এর মূল্য একশো কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। যে জিনিসগুলির সার্টিফিকেট রয়েছে সেগুলো বাদে বাকিগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এগুলি আমাদের রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এগুলির সঙ্গে ইতিহাস জড়িতে রয়েছে। তাই এগুলিকে সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রয়োজন রয়েছে।” ট্রাস্টির মিউজিয়ামে (Museum) আসাদুজ্জামানের নামে একটি সংগ্রহশালা করা হতে পারে বলেও জানা গিয়েছে।