সুকুমার সরকার, ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর খুনি সেনা সদস্য এম রাশেদ চৌধুরির যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা (Assylum) সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা। মামলা নতুন করে চালু হলে, রাশেদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের রক্ষাকবচ খোয়া যেতে পারে। আর তাতে রাশেদকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের বেশি দেরি নেই। এমনই সম্ভাবনা উসকে উঠেছে মার্কিন পত্রিকা ‘পলিটিকো’য় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। রাশেদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, তা আমেরিকার তরফে বাংলাদেশকে সাহায্য করা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, রাশেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় সংক্রান্ত রায়ের নথিপত্র খতিয়ে দেখছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল। এই তৎপরতাকে মামলাটি নতুন করে চালু করার উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন আইনজীবীরা। যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল পলিটিকো গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে। প্রতিবেদনে রাশেদ চৌধুরির আইনজীবীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ধরনের উদ্যোগকে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল যদি মামলা আবার সচল করেন এবং তাতে যদি রাশেদ চৌধুরির আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। তাতে বাংলাদেশের কাছে বঙ্গবন্ধুর এই খুনিকে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা সহজ হবে।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে তুমুল গুলির লড়াই, খতম মাদক পচারকারী-সহ ৫ দুষ্কৃতী]
রাশেদকে ফেরত পেতে বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছর ধরে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেওর (Mike Pompeo) সঙ্গে একাধিক বৈঠকে রাশেদ চৌধুরিকে প্রত্যর্পণের দাবি তুলেছেন। এছাড়া দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার প্রায় নিয়মিত ইস্যু – বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরি। বাংলাদেশ বিষয়টিতে এতই গুরুত্ব দিয়েছে যে গত বছর আগস্ট মাসে ব্যাংককে এক বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী ড. মোমেনকে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেও নাকি বলেছিলেন, ‘আপনাদের রাশেদ চৌধুরির বিষয়ে জানতে চাইবেন না।’ ড. মোমেন এর আগের বৈঠকেই তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনারা সুশাসনের, আইনের শাসনের কথা বলেন। আমি যদি আমার আদালতের রায় কার্যকর না করি তাহলে আমি আইনের শাসন কীভাবে করব? আপনি আমাকে সাহায্য করুন।’
[আরও পড়ুন: জঙ্গি হওয়ার জন্যই ধর্ম বদলে বিয়ে করেছিল, ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তি প্রজ্ঞার]
খুনি রাশেদ চৌধুরী সম্পর্কে ‘পলিটিকো’ জার্নালের প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘তিনি ভেবেছিলেন তাঁর অ্যাসাইলাম আছে। কিন্তু এখন তিনি মৃত্যুদণ্ডাদেশের মুখোমুখি হতে পারেন।’ রাশেদ চৌধুরি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদনে দাবি করেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা খুব কমই ছিল। বিষয়টি তুলে ধরে ‘পলিটিকো’ লিখেছে, বাংলাদেশ রাশেদ চৌধুরিকে ফেরত চায়। আর তাঁর ভাগ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বারের হাতে। জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার নীরবে মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি তাঁর পূর্ণ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এম রাশেদ চৌধুরির আদ্যাক্ষর ‘এ-এম-আর-সি’ সংক্রান্ত নথি পাঠাতে ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন।
The post বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদকে আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল, কার্যকর হতে পারে ফাঁসি appeared first on Sangbad Pratidin.