চারুবাক: আইনের ধারা অনুযায়ী যে কোনও নারীকে এমনকী কোনও যৌনকর্মীকেও তাঁর সম্মতি বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ বলে। নিজের আইনসিদ্ধ স্ত্রীকে কোনও স্বামীর ইচ্ছা বা সম্মতিবিরুদ্ধ সঙ্গমও ‘ধর্ষণ’। এগুলো আইনি কথা। কিন্তু চলমান জীবনে কোনও কলগার্ল বা বেশ্যার ধর্ষণ হওয়াকে কৌতূকের টুসকিতে উড়িয়ে দিই আমরা। আর নিজের স্ত্রী মানে তো সঙ্গম স্বামীর আইনি এবং সামাজিক অধিকার! সেখানে আবারও ঢুঁ মারবে কেন- স্বামীর ভাবখানা তেমনই। আর স্বামী নিজেও যদি উকিল হন, তাহলে? এমন জটিল আইনি-মানবিক-সামাজিক সমস্যা নিয়েই তন্ময় দাশগুপ্তর নতুন ছবি ‘ভাল মেয়ে খারাপ মেয়ে’।
[ আরও পড়ুন: বিনোদনের মোড়কেও গভীর বার্তা দেয় ‘ড্রিমগার্ল’ ]
এখনকার চলতি ঘরানার রহস্য থ্রিলার, গুপ্তধন, সত্যান্বেষণের বাইরে অন্য ভাবনার ছবি নিয়েই। কিন্তু ভাবনার সঙ্গে নির্মাতার সিনেমা ভাবনার ঐক্য থাকতে হবে তো! সেটা না হলে যে বিলিতি মদের পরিবর্তে গুড় বা চায়ের জল পরিবেশন হয়ে যায়! এই ছবির ক্ষেত্রেও হয়েছে। দুঁদে উকিল সমীরণ সেন (জয় সেনগুপ্ত) ধর্ষিতা বারসিঙ্গার রিয়াকে ধর্ষণের মামলার বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতে যায়। তার জয়ের প্রধান অস্ত্র ছিল আইনের ওই ধারাটি। কিন্তু সেটাই যে একসময় তাঁরই ব্যক্তিগত জীবনে বুমেরাং হয়ে আসবে, সেটা কল্পনাতেও আনতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী উর্মি স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা এনে বিচ্ছেদ চায়। পায়ও।
স্বামী-স্ত্রী এবং বারসিঙ্গারের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি চিত্রনাট্যে রিয়ার স্বামী ও মেয়ের সংসার, ভাবনা নামে এক সোশ্যাল অর্গানাইজেশনের কর্মীর স্বার্থ জড়ানো সমবেদনা- এমনকী বিনা পারিশ্রমিকে রিয়ার কেস লড়ার পিছনে উকিল সমীরণের জনপ্রিয়তা, খ্যাতি ও স্টেটাস বৃদ্ধির স্বার্থগত কারণটাও যে ছিল, সেগুলোর প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর সিনেমা ব্যবহারের প্রকরণের কৌশলটাই বহুলাংশে ব্যবসায়িক। তাই ফর্মুলাধর্মী। জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতা একটু বেশিই। গল্পকার সুচিত্রা ভট্টাচার্য বলেই কাহিনীর আর শিল্পীদের অভিনয়ের গতিতে ছবিটি তবু দৌড়তে পারে। ছবির শেষ অংশের সঙ্গে এডলস হাউজ গল্পের মিল খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আজ মনের আঁচলে বা ভেবে নাও গান দু’টির ব্যবহারও বাহুল্য। যেমন প্রয়োজন ছিল না উর্মির দীর্ঘ চিঠি লেখার।
[ আরও পড়ুন: টানটান গল্পেই বাজিমাত ‘পরিণীতা’র, নজর কাড়ল শুভশ্রীর অভিনয় ]
তবে সাজানো অন্তঃসারশূন্য এই চিত্রনাট্যকে দু’তিনজন অভিনেতা কিঞ্চিৎ সহনীয় করেছেন। প্রথম নাম শ্রীলেখা মিত্রর। কয়েকটা দৃশ্যে ওঁর অতিরিক্ত ন্যাকামি ও মেয়েলিপনা একটু অসহনীয় হলেও শেষ পর্বে শ্রীলেখার প্রতিবাদী হওয়ার মুহূর্তগুলো তাঁর অভিনয়ে জীবন্ত। জয় সেনগুপ্তর সমীরণ খুবই স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ। রিয়ার চরিত্রে অনন্যা চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজস্ব ধারা বজায় রেখেছেন। খুবই মরমী ও সংবেদনশীল তাঁর চরিত্রায়ণ। রিয়ার স্বামীর চরিত্রে শিলাজিৎও বেশ ভাল। তাঁর গলায় একটি গান শোনানোই যেত। পরিচালক হয়তো ভেবেছিলেন না শোনানোটাই চমক হবে।
The post শ্রীলেখা-অনন্যার অভিনয়ের জোরেই উতরে গেল ‘ভাল মেয়ে খারাপ মেয়ে’ appeared first on Sangbad Pratidin.