সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নেটদুনিয়ায় ট্রেন্ডিং বয়কট মালদ্বীপ (Maldives)। বলিউড তারকা থেকে ক্রিকেটার- সকলেই একবাক্যে বলছেন, ছুটি কাটাতে মালদ্বীপ নয়, গন্তব্য হোক ভারতের লাক্ষাদ্বীপ। একমত দেশের আমজনতাও। মালদ্বীপের টিকিট কাটা থাকলেও তা বাতিল করে দিচ্ছেন অনেকে। এমনকী মালদ্বীপে যাওয়ার কোনও বুকিং করতে রাজি নয় বলেও জানিয়েছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি। সোশাল মিডিয়ায় কার্যত ‘ভারতের শত্রু’ হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রটি। কিন্তু ভারতীয় পর্যটকদের অতি প্রিয় এই ডেস্টিনেশনের সঙ্গে কেন আচমকা দূরত্ব বাড়ল? তার জন্য দুই দেশের গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে।
ভারত-মালদ্বীপ (Maldives India Crisis) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ছবিটা কয়েকমাস আগেও এতখানি খারাপ ছিল না। সেদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ‘ভারতপন্থী’ ইব্রাহিম মহম্মদ সোলির আমলেও সুসম্পর্ক ছিল দুই দেশের। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে দুই দেশের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, মালদ্বীপের জলসীমায় পরীক্ষামূলক কাজকর্ম চালাবে ভারতীয় নৌসেনা। তাছাড়াও মালদ্বীপে মোতায়েন ছিল ভারতীয় সেনার বাহিনী।
১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই মালদ্বীপের দিকে বারবার সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারত। সেদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে বিশেষ আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা, মালদ্বীপের জন্য সবকিছুই করেছে ভারত। প্রতিবছর প্রচুর ভারতীয় পর্যটক মালদ্বীপে ঘুরতে যান। বিপুল ব্যবসায়িক সম্পর্কও রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সদ্ভাবের পরিবেশ বদলে যেতে থাকে ‘চিনপন্থী’ মহম্মদ মুইজু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে। মালদ্বীপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে ভারত। স্থানীয়দের মধ্যে এই ধারণা ঢুকিয়ে দিতেই ভারতের প্রতি বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। এমনকী মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর দাবিতে রাস্তায় নামে আমজনতা। এমনই নানা ইস্যুতে ধাক্কা খেতে থাকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
[আরও পড়ুন: স্টুডেন্ট ইন্টার্নশিপ প্রকল্পের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী, কারা সুবিধা পাবেন?]
এহেন পরিস্থিতিতে আগুনে ঘি পড়ার মতো হয়ে ওঠে মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফর ও সেখানকার ছবি। লাক্ষাদ্বীপের সুদৃশ্য ছবি দেখে জনৈক নেটিজেন মন্তব্য করেন, লাক্ষাদ্বীপের এই সৌন্দর্য্যের ফলে পর্যটন বাড়বে সেখানে। ফলে ধাক্কা খাবে চিনপন্থী মালদ্বীপের পর্যটন। সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। ভারতীয় নেটিজেনের মন্তব্যের পালটা দিতে আসরে নেমে পড়েন মালদ্বীপের নেতা-মন্ত্রীরা। ভারতের সমুদ্রসৈকতকে অপমান করার পাশাপাশি মোদিকেও ‘হাতের পুতুল’, ‘ভাঁড়’ ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করেন তাঁরা।
যদিও তড়িঘড়ি দোষী মন্ত্রীদের সাসপেন্ড করে মালদ্বীপের মন্ত্রিসভা। তবে বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়া যায়নি। তবে মোদির হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন মালদ্বীপের বিরোধী নেতারা। ভারতকে ‘বন্ধু’ তকমা দিয়ে সোলির মত, দুই দেশের গভীর বন্ধুত্বকে নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে মালদ্বীপের বর্তমান ‘চিনপন্থী’ সরকার। সেই সঙ্গে প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ জানান, ভারত যদি মালদ্বীপকে বয়কট করতে থাকে তাহলে বড় ধাক্কা খাবে দেশের অর্থনীতি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন হবে মালদ্বীপের পক্ষে। দুই দেশের সম্পর্ক আদৌ কবে স্বাভাবিক হবে, জানা নেই। তবে জনমানসে মালদ্বীপের ছবিটা যে আগের মতো সুন্দর নেই, একথা বলাই যায়।