সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন শতাব্দী পেরিয়ে ফিরে আসা! ব্রিটেনের নরফোকে (Norfolk) পরিত্যক্ত, বুজে আসা জলাশয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানো বিরল ফুল দেখে বিস্ময়ের সীমা-পরিসীমা নেই উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের। ফুলের পুনরাবির্ভাবকে তাঁরা ‘পুনর্জন্ম’ বলে মনে করছেন। বলছেন, উদ্ভিদবিজ্ঞানের জগতে এ এক বিরল ‘রত্ন’! গোলাপি আভার ফুল যেন নতুন দিনেরই ইঙ্গিত।
অনেকটা ছাই উড়িয়ে অমূল্য রতন পাওয়ার মতোই বিরল উদ্ভিদ (Plant) গ্রাস-পলিকে খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। জানা গিয়েছে, ব্রিটেনের নরফোক অঞ্চলে শতাব্দী প্রাচীন পরিত্যক্ত জলাশয় বেষ্টিত অনেকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। কোনওটা বুজে গিয়েছে তার মধ্যে। কোনওটা আবার শুকিয়ে কাঠ। তো সেই জায়গাটিকে নতুন করে কোনও কাজে ব্যবহার করা যায় কি না, প্রশাসন সে বিষয়ে খোঁজখবর করছিল। লকডাউনের পর কাজকর্ম শুরু হতে একদল উদ্ভিদবিজ্ঞানীকে সেখানে পাঠানো হয়, জলাশয় ঘিরে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য কিংবা বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি করা যায় কি না, তা দেখতে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (UCL) অধ্যাপক কার্ল সায়ের সেখানে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন।
[আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ! থাইল্যান্ডে মিলল ৫ হাজার বছরের পুরনো তিমির কঙ্কাল]
তাঁর কথায়, “নরফোকে আমরা গুটিকয়েক গ্রাস-পলি খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু এখানে এর ভালমতো চাষ হতে পারে। গোটা জায়গাটা জুড়েই চাষ করা যায়। তাতে এর সৌন্দর্যও বজায় থাকে, আবার ফিরে আসা বিরল উদ্ভিদটিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।” গ্রাস-পলির ছবি দেখে রোমাঞ্চিত নরফোকের মানুষজন। তাঁরা বলছেন, সেই কবেকার ছবিতে এই ফুল দেখেছিলেন, তারপর এখন টাটকা ছবি দেখছেন। স্থানীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা ফুলটিকে চিহ্নিত করার পর ইতিহাস ঘেঁটে বলছেন, প্রায় ১০০ বছর পর নাকি এই ফুল অজ্ঞাতবাস ছেড়ে দিনের আলোয় প্রস্ফুটিত হয়েছে। ব্রিটেনে (UK) এই ফুল দেখতে পাওয়া বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।
[আরও পড়ুন: এ কোন সকাল…! আলাস্কার এই শহরে আগামী ৬৫ দিন দেখা মিলবে না সূর্যদেবের]
কিন্তু শতাব্দী পেরিয়ে ফের জেগে ওঠার কারণটা কী? বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রাস-পলির বীজ ফেলা হয়েছিল এখানে। তারপর কোনও কারণে কাদার স্তরে তা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল পুরোপুরি। পরবর্তী সময়ে সেখানে উইলো গাছ লাগানো হয়। বড় গাছ ঢেকে দেয় মাটি। কিন্তু গ্রাস-পলির বীজ মাটির গহ্বরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। এরপর ধীরে ধীরে উইলো গাছগুলি কেটে ফেলার পর সূর্যের আলো পেয়ে চারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। তারপর ফুলে ভরে গিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীদের অনেকের মতে, যে কোনও পরিত্যক্ত জলাজমি ভালভাবে সংরক্ষণ করা হলে, তাতে যে কত রত্নই লুকিয়ে থাকতে পারে, দেখিয়ে দিল গ্রাস-পলি।