সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাঙালির বারো মাসে, তেরো পার্বণ। নানা পুজো যেমন হয়। তেমনই আবার নানা ব্রতকথা পালন করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম ইতুপুজো। কার্তিক সংক্রান্তিতে শুরু হওয়া এই ব্রতকথা পালন করা হয় গোটা মাসে। অগ্রহায়ণের প্রতি রবিবার নিয়ম মেনে ইতুপুজো করে থাকেন মহিলারা। আসলে ইতু হল সূর্যদেব। তবে গ্রামবাংলায় ইতুলক্ষ্মীর কথা মাথায় রেখে ব্রতপালন করেন।
ইতুপুজো নিয়ে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। কথিত অগে, এক ব্রাহ্মণের দুই কন্যা উমনো, ঝুমনো। একদিন তিনি স্ত্রীকে বলেন পিঠে খাবেন। সমস্ত সামগ্রী নিয়ে আসেন। মেয়েরা যেন ওই পিঠের ভাগ না পায়, তা-ও জানান ব্রাহ্মণ। তাঁর নির্দেশ পালন করা হচ্ছে কিনা তা চৌকাঠে বসে নজরদারি করছিলেন। আর হিসাব করছিলেন। খেতে বসে তিনি দেখেন দু'টি পিঠে কম। তাতে রেগে যান। বাড়ি থেকে দুই মেয়েকে জঙ্গলে রেখে আসেন। সেখানে তাদের সঙ্গে কয়েকজন দেবকন্যার সাক্ষাৎ হয়। তারা ইতুব্রত পালন করছিল। নিজেরাও করেন। বাড়ি ফেরার পর মাকে পুরো ঘটনাটি জানায় দুই মেয়ে। তাদের কথামতো বাড়িতেও ইতুব্রত পালন করা হয়। আর তারপর গরিব ব্রাহ্মণ হয়ে যান ধনবান। এরপর উমনো, ঝুমনোর বিয়ে হল। উমনো চাইল মাগুর মাছ আর ছাঁচি পান খেয়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে। আর ঝুমনো তার বাবাকে বলে ইতুপুজোর নানা সামগ্রী এনে দিতে।
জিনিসপত্র নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে উমনো দেখল মড়ক, খরা, অগ্নিকাণ্ড-সহ নানা অশুভ দৃশ্য। আর ঝুমনো যেতে যেতে পথে দেখল বিবাহ, যজ্ঞ, উপনয়নের মত শুভ আচার। শ্বশুরবাড়িতে পা রাখামাত্রই উমনোর বাড়িতে অঘটন। আর ঝুমনোর স্পর্শে শ্বশুরবাড়ির লোহার সামগ্রী সোনা হয়ে যায়। নববিবাহিত রাজা উমনোকে তাড়িয়ে দেয়। ঝুমনো তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। একসঙ্গে ইতুপুজো করে তারা। তাতে নাকি ঝুমনোর শ্রীবৃদ্ধি হয়। এই পৌরাণিক কাহিনিকে মাথায় রেখে ইতুপুজো করেন বহু মহিলা।
একটি মাটির ঘটে মাটি ভরে কচু, কলমি শাক, শুষনি শাক, ধান, আখ, পাঁচ কলাই প্রভৃতি গাছ এবং বীজ বপন করে ইতু বানিয়ে পুজো করা হয়। প্রতিদিন শুদ্ধ বস্ত্রে শুদ্ধ মনে ইতুকে জল দেওয়া হয়। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ব্রাহ্মণ দিয়ে ইতুপুজো করাতে হয়। যাঁরা ইতুপুজো করেন তাঁদের অগ্রহায়ণ মাসের রবিবার উপবাস করেন। উপবাস ভাঙার পর ফল খেতে পারেন। এদিন আমিষ খাবার খাবেন না। তেল, হলুদ ছাড়া সিদ্ধ খাবার খেতে হয়। রাতে আর অন্নগ্রহণ করতে পারেন না ব্রতপালনকারীরা। পুরো অগ্রহায়ণ মাস ধরে পুজোর পর অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে পুকুর বা নদীতে ইতুর বিসর্জন দিতে হয়। ব্রতপালন করলে সংসারে আসে সুখসমৃদ্ধি।
