সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৫ বছর পর ফের কবির কলম প্রতিবাদে গর্জে উঠল। প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি লাইনে ঝরে পড়ছে খানখান হয়ে যাওয়া হৃদয়ের যন্ত্রণা, হাহাকার। রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে রাতের অন্ধকারে ঘুমের মধ্যে পুড়ে নিহতদের মধ্যেই কবি জয় গোস্বামী (Joy Goswami) যেন খুঁজে পাচ্ছেন স্বজনদের। পুড়ছেন তিনিও। আর তাই সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম রেখেছেন ‘দগ্ধ’। রয়েছে আটটি কবিতা।
এর আগে ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম (Nandigram) কাণ্ডের পরের বছরই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর এক কাব্যগ্রন্থ– ‘শাসকের প্রতি’। সাম্প্রতিকতম সংকলনটিতে অনেকেই আগের ছায়া দেখছেন। জয় গোস্বামীর ‘দগ্ধ’ নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। একাংশের মত, স্রেফ ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। নেপথ্যে কারা, সে সম্পর্কে একটি শব্দও না লিখে প্রতিবাদের (Protest) স্বর অনেক মৃদু করেছেন কবি। অনেকে তাঁকে শাসক ঘনিষ্ঠ বলেও ফের তোপ দেগেছেন।
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘শাসকের প্রতি’ কাব্যগ্রন্থটি নন্দীগ্রাম গণহত্য়ার প্রেক্ষাপটে রচিত। তার একেবারে শেষে জয় গোস্বামী লিখেছিলেন, ”এখনো, এখনো যদি ঘরে বসে নিজেকে বাঁচাই/ যদি বাধা না-ই দিই, তত্ত্ব করি কী হল কার দোষে/ যদি না আটকাই, আজ না-যদি ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি/আমার সমস্ত শিল্প আজ থেকে গণহত্যাকারী।”
এবারের ‘দগ্ধ’ কবিতায়ও যেন সেই স্বরেরই অনুরণন। কবির কলমে লেখা হয়েছে , ”মাথা ঝাড়া দেয়, চুলে জ্বলন্ত বাতাস লাগে/ চুল ঝাড়া দেয়, ঝড়ে উড়ে আসে গরম ছাই/ আমি মৃত্যুর পরের অংশ লিখতে চাই।”
[আরও পড়ুন: হিজাব পরায় ঢুকতে বাধা! ভারতীয় রেস্তরাঁ ‘বন্ধ’ করল বাহরিন]
‘দগ্ধ’ কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতায় সরাসরি উল্লেখ রয়েছে বগটুই গ্রামে নিহতদের নামের তালিকা। কবি লিখেছেন, ”এই ঘটনার পর কবিতা বলে কি কিছু বাকি থাকে নাকি?/ ঘৃণায় লজ্জায় শোকে ক্রোধে/ কবিতার খাতা ছিঁড়ে ফেলতে থাকি।” এরপরই তিনি নিহতদের নাম, বয়স উল্লেখ করেছেন। লিখেছেন, ”আমার লেখার ঘরে মেঝেভর্তি করে/ একজনের ওপর একজন/ ওরা স্তূপীকৃত হয়ে আছে…/ওদের দাফন করব এখন কোথায়?/ বলো কোন কবিতার কাছে?”
[আরও পড়ুন: ধোসায় মাদক মিশিয়ে দিল্লির হোটেলে যুবতীকে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেল, কলকাতা থেকে ধৃত যুবক]
এ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সমালোচনা যতই হোক, ‘দগ্ধ’ প্রকৃত অর্থেই কবিহৃদয়ের দহনের দলিল, তা কাব্যপ্রেমী মাত্রই উপলব্ধি করবেন। একথা বাস্তব যে জয় গোস্বামী এই মুহূর্তে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। অসুস্থ শরীরেও তাঁকে মাঝেমধ্যে দলীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায়। কিন্তু কবির কাজ তো কাব্যের ভাষায় হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশ করা, কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ‘শোষক’ হিসেবে চিহ্নিত করা কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকতা করা নয়। জয় গোস্বামী ঠিক সেই কাজটিই করেছেন। সংবেদনশীল মন মাত্রই এ কাব্যগ্রন্থের মধ্যে নিশ্চিতভাবে খুঁজে নেবে প্রতিবাদের ভাষা।