গোবিন্দ রায়: ক্যানসারে আক্রান্ত চিত্রা দত্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। সঞ্চয়ের সম্বল টুকু দিয়ে মাথা গোঁজার জন্য একটি তিন কামরার ফ্ল্যাট কিনেছিলেন বিধাননগর পুরসভার অন্তর্গত বাগুইআটি অঞ্জলি অ্যাপার্টমেন্টে। কিন্তু ওই অ্যাপার্টমেন্টের যাঁরা ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছেন তাঁরা ওই শিক্ষিকার ফ্ল্যাটের সামনে একটি অস্থায়ী অবৈধ অফিস ঘর তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। এনিয়ে পুরসভার কাছে অভিযোগ জানালে শুরু হয় অত্যাচার। বিষয়টি পুলিশের কাছে জানালেও লাভ কিছু হয়নি। তাই অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা।
এই বিষয়ে চিত্রাদেবীর আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে সমস্যার সূত্রপাত। ফ্ল্যাটের সামনে অস্থায়ী অবৈধ অফিস ঘর তৈরি করতে বাধা দিয়েছিলেন চিত্রাদেবী। বিষয়টি নিয়ে বিধাননগর পুরসভায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন তিনি। অভিযোগ জানানোর পরে পুরসভার তরফে ওই অ্যাপার্টমেন্টের বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই অবসরপ্রাপ্ত ক্যানসারে আক্রান্ত ওই শিক্ষিকার ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু করে অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজমেন্টের থাকা সদস্যরা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার আইনজীবীর আরও অভিযোগ, অ্যাসিড ছোড়া থেকে শুরু করে ইট ছোড়া এবং অত্যাচারের মাত্রা নিত্যদিন বেড়ে গিয়েছে। এবং এই সমস্ত কিছুর পিছনে মূলত ইন্ধন যুগিয়েছেন আবাসন পরিচালন কমিটির সেক্রেটারি সজল কর্মকার এবং নমিতা পাল।
[আরও পড়ুন: ‘এখনও তাকালে সুদীপ্ত-মইদুলদের দেখতে পাই’, ইনসাফের ব্রিগেডে আবেগপ্রবণ মীনাক্ষী]
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার আইনজীবী আরও জানান, আবাসনে এঁরা এতটাই প্রভাবশালী যে বাগুইআটি থানার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরেও বারবার তাঁরা এসেছেন। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটে অভিযুক্তদের সঙ্গে আলাপচারিতা করে অভিযোগকারিণীকেই শাসিয়ে চলে যায় পুলিশ আধিকারিকরা। এমনকী আবাসনের পরিচালন কমিটি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার ফ্যাটে ঢোকা বেরনোর রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং হুমকিও দেয়। শুধু তাই নয় এই যাবতীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিধাননগর পুলিশ কমিশনের উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেও কোনও সুরাহা তিনি পাননি। অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন চিত্রাদেবী।
[আরও পড়ুন: ইডির উপর হামলা ‘বোকামি’, সন্দেশখালির ঘটনায় বিরক্ত শতাব্দী]
অভিযোগ, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হতেই অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। যেদিন মামলার প্রতিলিপি ওই অ্যাপার্টমেন্টের পরিচালন কমিটির হাতে পৌঁছয় সেদিন থেকেই ওই ক্যানসারে আক্রান্ত শিক্ষিকার উপর আরও চাপ সৃষ্টি করা হয়। সারাদিন আবাসনের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। প্রতিনিয়ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা এবং তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। যাতে অবিলম্বে হাইকোর্ট থেকে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহের শুরুতেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।