shono
Advertisement

বিখ্যাত নাটক থেকে ওয়েব সিরিজ, কতটা জমল অনির্বাণ-কৌশিকের ‘টিকটিকি’?

ওয়েব সিরিজটি ঘিরে প্রত্যাশার পারদ চড়তে শুরু করেছিল ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই।
Posted: 05:50 PM Mar 19, 2022Updated: 05:52 PM Mar 19, 2022

বিশ্বদীপ দে: সিনেমা থেকে মঞ্চ। তারপর টেলিফিল্ম হয়ে ওয়েব সিরিজ। শাফের রচিত ‘স্লিউথ’ নাটকের বঙ্গানুবাদ ‘টিকটিকি’র (Tiktiki) নয়া রূপ ঘিরে প্রত্যাশা তাই শুরু থেকেই ছিল আকাশছোঁয়া। ব্রিটিশ ছবিটি নয়, বাঙালির নস্ট্যালজিয়া জুড়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেনের নাটক ও টেলিফিল্ম। সত্যসিন্ধু চৌধুরী ও বিমল নন্দীর ডুয়েল এবার বদলে গিয়েছে সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ দেব ও মিলন বসাকের লড়াইয়ে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly) ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)। এই সময়ের দুই শক্তিমান অভিনেতার টক্কর ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই পারদ চড়তে শুরু করেছিল ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি মিটল দর্শকের প্রত্যাশা?

Advertisement

শুরুতেই একটা কথা বলে নেওয়া দরকার। ‘হইচই’-এর সাম্প্রতিক অন্য সব ওয়েব সিরিজের থেকে ‘টিকটিকি’ আলাদা। কেননা বিখ্য়াত নাট্যরূপটির সঙ্গে তুলনা তাঁদের মনে আসবেই যাঁরা সেটি দেখেছিলেন। আবার একেবারে নয়া প্রজন্মের কাছে এটা একটা নতুন ওয়েব সিরিজ। যেখানে ৬টি এপিসোড জুড়ে কেবল দু’জনই চরিত্র! তাঁদের দিয়েই ধরে রাখতে হবে গল্পের গতি। চ্যালেঞ্জের এই জোড়া ফলা শুরু থেকেই ছিল।

[আরও পড়ুন: ‘৪৭ বছর বয়সেও অন্তঃসত্ত্বা?’, পোশাক নিয়ে নেটদুনিয়ায় কটাক্ষের শিকার কাজল]

সৌমিত্রর নাটকে গল্প শুরু হয় বেশ আটপৌরে ধাঁচে। নিজের অতিকায় ও নানা রকম বোর্ড গেমে ঠাসা ঘরে বসে নতুন লেখা গোয়েন্দা গল্প পড়ছেন তিনি। এরপর গল্পে ঢোকেন কৌশিকের চরিত্রটি। ধীরে ধীরে গল্প জমতে থাকে। গতি আসে। কিন্তু ওয়েব সিরিজের শুরুতেই ড্রোনে তোলা অন্ধকার রাস্তায় গাড়ি যাওয়ার দৃশ্য বুঝিয়ে দেয় গল্পে রোমাঞ্চের রসদ শুরু থেকেই পুরোমাত্রায় রাখতে চেয়েছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় (Dhrubo Banerjee)।

অভিজাত বাঙালি সমাজের প্রতিনিধি সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ দেব। তাঁর শরীরে নীল রক্ত। কিন্তু তাঁর স্ত্রী মিমির মন মজেছে ‘শাঁখারির ছেলে’ মিলনে। পলিটেকনিক পাশ মিলনের রয়েছে গেজেটসের ব্যবসা। ‘টিকটিকি’ কেবল এক নারীকে ঘিরে পুরুষের দ্বন্দ্ব নয়। তা সমাজের দুই শ্রেণির লড়াই। সামন্তপ্রভুদের সঙ্গে প্রলেতিরায়েতের সংঘাতের এক অন্যতর ন্যারেটিভ। অতিকায় প্রাসাদোপম বাড়িটিতে একাই রয়েছেন সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ। সমস্ত কাজের লোককে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি মুখোমুখি বসতে চান মিলন নামের এই ছোকরার সঙ্গে। মুখে অবশ্য তাঁর দাবি, মিমিকে নিয়ে তিনি অতিষ্ঠ। কাজেই সে যদি মিলনকে বিয়ে করে তাতে তাঁর কোনও আপত্তিই নেই। বরং তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য হিসেবে একটা নেকলেস উপহার দিতে চান। ৫০ লক্ষের ওই নেকলেস কিন্তু মিলনকে চুরি করতে হবে! মিলন তো হাঁ। এ আবার কেমন খেলা? এ কি নিছকই খেলা? নাকি এর আড়ালে রয়েছে কোনও অভিসন্ধি?

[আরও পড়ুন: মিতালি-ঝুলনদের রেকর্ডের দিনেও অজিদের বিরুদ্ধে হার, মহিলা বিশ্বকাপে চাপে ভারত]

এর বেশি বলা মানে স্পয়লারের আগমনধ্বনি। কেবল এইটুকুই বলার, গোটা সিরিজ জুড়েই অব্যাহত সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ ও মিলনের মগজাস্ত্রের লড়াই। দুই ভিন্ন সমাজ, ভিন্ন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে চেয়েছেন কৌশিক ও অনির্বাণ। কিন্তু… এই কিন্তুই যেন থমকে দেয় গল্পের গতিকে। ছবির চিত্রনাট্য বড়ই অদ্ভুত। একেবারে শুরুতে যখন গল্পটার পরত ধীরে ধীরে খোলাটাই স্বাভাবিক হত, সেখানে গল্প এগিয়েছে প্রায় হুড়মুড়িয়ে। কাহিনিটি এমনিতেই বেশ ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। দ্রুত সেই গল্প বলতে গিয়ে সেটিকে যেন অবিশ্বাস্য করে তুলেছেন পরিচালক। আসলে কৌশিক সেনের চরিত্রটি ছিল বেশ শান্তশিষ্ট। তাঁকে দাবড়ে, তাঁর উপরে প্রভাব খাটিয়ে কনভিন্স করে ফেলা সৌমিত্রর চরিত্রটির পক্ষে তাই সহজ ছিল। কিন্তু এখানে অনির্বাণের চরিত্রটি বেশ ডাকাবুকো। ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এর খোকার ছায়া এসে পড়েছে তার সংলাপ ও শরীরী ভাষায়। এরকম চরিত্রের একজন মানুষ চট করে প্রেমিকার স্বামীর আজব প্রস্তাবে বিশ্বাস করবে না সেটাই বোধহয় স্বাভাবিক ছিল।

গল্প কিছুটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে কাহিনির দ্বিতীয় পর্বে এসে। এই সময় থেকেই কৌশিকের অভিনয় আরও জোরাল হয়। কিন্তু অনির্বাণ যেন তাঁর চরিত্রটির প্রতি কিছুতেই সুবিচার করে উঠতে পারেননি। কৌশিককে টেক্কা দেওয়ার মুহূর্তগুলোয় তাঁর অভিব্যক্তি অনেক জায়গাতেই বড় বেশি আরোপিত মনে হয়েছে। সিরিজটি যেভাবে শেষ করা হয়েছে সেটা বেশ ভাল। বলা যায়, সৌমিত্রর নাটকের চেয়েও এখানে জটিলতা আরও বেশি। অন্ধকার যেন আরও বেশি করে ঘনায়। বিষণ্ণতা যেন একটু বেশিই ফুটে ওঠে। আগাথা ক্রিস্টির ভুবনজয়ী গোয়েন্দা এরক্যুল পোয়ারোর একটি সংলাপ রয়েছে, ”লাইফ ইজ অনলি ওয়ান অফ দ্য গ্রেট ইলিউশনস।” একথা যেন সৌমেন্দ্রকৃষ্ণর জীবনে এক ট্র্যাজেডি হয়ে দেখা দেয়।

কিন্তু তবু কেন যেন মন ভরে না। আসলে কৌশিক কিংবা অনির্বাণ অনেক চেষ্টা করেছেন। তবু তাঁদের প্রতি দর্শকের ‘ক্যাথারসিস’ সেভাবে জন্মায় না। তাই দর্শক হিসেবে হতাশ হতেই হয়। চিত্রনাট্যের গতির রকমফেরও এক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর। ‘স্বপ্নসন্ধানী’র প্রোডাকশনের সঙ্গে তুলনা না করেও বলা যায়, যাঁরা প্রথমবার দেখছেন, তাঁদেরও অনেকের মনে হয়তো এই খটকা উঁকি দেবে। সব মিলিয়ে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ‘ড্রিম প্রোজেক্ট’ একবার দেখাই যায়। কিন্তু খুব বেশি প্রত্যাশা না রেখে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement