নির্মল ধর: শুধু বাঙালি নয় ভারতীয় বিবাহ নামক প্রথায় বিয়ের পর মেয়েদের পদবি বদলটাই নাকি শাস্ত্রীয় নীতি। কিন্তু আসল সত্যটি হল, ব্রাহ্মণ্যবাদীদের চেষ্টায় স্ত্রীর প্রতি পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই পদবি পরিবর্তনের এই প্রথা। বলা হয়, গোত্রান্তর হয়ে গেলে স্বামীর পদবিই স্ত্রীর প্রাপ্য। কিন্তু আমাদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, রামায়ণ-মহাভারতের কোনও চরিত্রের কোনও পদবি তো নেই! রাম-লক্ষ্মণ, যুধিষ্ঠির-অর্জুনের পদবি আমরা জানি কি? সুদীপ দাসের এই নতুন ছবি ‘কুলের আচার’ এই পদবি বদলের এক কিসসা নিয়েই তৈরি।
বিক্রম (প্রীতম) এবং মধুমিতা (মিঠি) দু’জনেই আধুনিক মনষ্ক তরুণ-তরুণী। ভালবেসে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর পদবি বদলাতে চায় না মিঠি। এই সিদ্ধান্তে তাঁর স্বামী প্রীতমেরও সায় রয়েছে। শ্বশুরবাড়িতে এনিয়ে কোনও ঝামেলাও ছিল না। কিন্তু মিঠির শাশুড়ি মিতালি (ইন্দ্রাণী হালদার) হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেন তিনিও এত বছর পরে আবার পুরনো পদবি ব্যবহার করবেন। সেখান থেকেই শুরু যাবতীয় বিপত্তি।
হালকা হাসির মোড়কেই গল্প সাজিয়েছেন পরিচালক। এ ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর আবার মৈনাক ভৌমিক। তাঁর ছোঁয়ায় পরিচালক পরিচালক সুদীপ দাস প্রায় গোটা চিত্রনাট্যটিকে সুন্দরভাবে পরিবেশন করেছেন। বেশ ভাল লাগে প্রীতম-মিঠির মিষ্টি ঝগড়া, রোম্যান্টিক মুহূর্ত, প্রবীণ মিতালি-প্রণোতোষের ঝগড়া-বাদানুবাদের মুহূর্তগুলো। শেষপর্যন্ত পরিচালকের বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পদবি বদলটা বড় কথা নয়, আসল কথা হল পারস্পরিক সমঝোতা, ভালবাসা ও বোঝাপড়া।
[আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ের রেস্তরাঁয় বিয়ারে চুমুক মীরের, ‘এটাও চলে নাকি?’ প্রশ্ন নেটিজেনের]
শাশুড়ির মিতালি এক জায়গায় বলেন, “বংশ, কুল সব বেটে আচার করে খাইয়ে দেব।” হ্যাঁ, পরিচালক সত্যিই আচারের মতো টক-ঝাল-মিষ্টি দিয়ে পারিবারিক পরিবেশ এবং ঘটনার বিন্যাস করেছেন। এবং ছবির সমাপ্তি দর্শকদের এক বুক মোচড়ানো আনন্দ দেয়।
“আমি আমার মধ্যে তোমায় খুঁজে পাই, তুমি তোমার মধ্যে আমায় খুঁজে পাও কি…”, প্রসেনের লেখা এই গানটিই ‘কুলের আচার’ (Kuler Achaar) ছবির থিম সং।
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের মধ্যে নিজেদের খুঁজে পেলেই সংসার সুখের হয়, পদবি বদল করে নয়।অভিনয়ে বিক্রম (Vikram Chatterjee) ও মধুমিতা (Madhumita Sarcar) জুটি বেশ মানানসই। মিতালি ও প্রণোতোষের চরিত্রে ইন্দ্রাণী হালদার (Indrani Haldar) ও সুজন মুখোপাধ্যায় (Sujan Neel Mukherjee) তাঁদের কমিক সেন্সকে কাজে লাগিয়ে সিচুয়েশনগুলো সুন্দর করে তুলেছেন।এই ছবি পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসে দেখার মতো। শেষে একটি কথা লেখা যায়, আজকাল তো পদবি বদল হয় না পদবি যোগ হয়। যেমন রায় চক্রবর্তী, বন্দ্যোপাধ্যায় পাল, সেন হালদার – এমনটা হলে ক্ষতি তো কিছু নেই, তাই না!
ছবি – কুলের আচার
অভিনয়ে – বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, মধুমিতা সরকার, ইন্দ্রাণী হালদার, সুজন মুখোপাধ্যায়
পরিচালনায় – সুদীপ দাস