অর্ণব দাস, বারাসত: গত বছর পর্যন্ত দুর্গাপুজোয় গমগম করে উঠত বাড়িটা। পুজোর আয়োজন, লোকজন আসাযাওয়া লেগেই থাকত। এবার সম্পূর্ণ অন্যরকম। ৮ আগস্টের অভিশপ্ত রাতের পর থেকে যেন বদলে গিয়েছে সব কিছু। গোটা বাড়িই অন্ধকার। জ্বলেনি আলো। না আছে পুজো প্রস্তুতি। বাজবে না ঢাকও। সুবিচারের দাবিতে এবার ধরনায় বসবেন নির্যাতিতার বাবা-মা। থাকবেন আত্মীয়স্বজনেরাও।
নির্যাতিতার বাবা বলেন, "পুজোয় আমরা বাড়িতে আনন্দে থাকতাম। বাড়িতে পুজো হত। লোকের আগমনে গমগম করত। তাই এবার উঠোনে থাকব। ধরনা মঞ্চ আমরাই তৈরি করছি। ষষ্ঠী থেকে দশমী আমরা পরিবারের সদস্যরা ধরনায় বসব। আমরা কাউকে আসতে বলিনি। কিন্তু, যদি কেউ আসতে চান, আসতে পারেন। তবে মঞ্চে নয়, নিচে জায়গা থাকবে সেখানে বসবেন। কারণ, আমরা কোন রাজনীতির রং লাগাতে চাই না। মূলত বিকেলের পর থেকেই ধরনায় বসব। সকালেও থাকার চেষ্টা করব।"
গত ৯ আগস্ট, আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তার পর থেকে সুবিচার, নিরাপত্তা-সহ একাধিক দাবিতে আন্দোলনে শামিল জুনিয়র ডাক্তাররা। কর্মবিরতিও পালন করেন তাঁরা। প্রথম দফায় ৪১ দিনের মাথায় জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। এর পর গত মাসের শেষে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতিতে শামিল হন জুনিয়র ডাক্তাররা। গত শুক্রবার মাঝরাত থেকে কাজে ফিরেছেন তাঁরা। তবে রাজ্য সরকারকে বেঁধে দেওয়া ডেডলাইন পেরনোর পরেও দাবিপূরণ না হওয়ায় বর্তমানে আমরণ অনশন করছেন ৬ জুনিয়র চিকিৎসক।
এই প্রসঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "বিচার না পাওয়ার বিষয়টি যেমন আছে, তেমনই সরকারকে ওঁরা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার কোনও কথা বলেনি, এমনকি এখনও অসহযোগিতা করছে। বায়ো টয়লেটের জন্য ডাক্তাররা মেল পাঠিয়েছিল, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করেনি। এইসব বিষয়গুলি নিয়ে সরকার কেন মানবিক হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।" আলোচনার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর সমস্যার সমাধান করুন, আর্জি নির্যাতিতার মায়ের। তিনি বলেন, "জুনিয়র চিকিৎসকরা অনশনে বসেছে। ওদের জন্য ঘরে বসেই কান্না পাচ্ছে। মেয়েকে হারিয়ে ওরা এখন আমার সন্তান। তাই খুবই কষ্ট পাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব, জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করেন।"