অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য! গাড়ির ভিড়কে পাশ কাটিয়ে লুটের মাল নিয়ে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। পিছন থেকে একদল লোক তাদের আটকাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে হঠাৎই জনসমুদ্রে মিলিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। হাতছাড়া হয়ে কোটি কোটি টাকা কিংবা সোনা। মঙ্গলবার দুপুরে এমনই এক রোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষী থাকল হাওড়া ব্যাঁটরা এলাকা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ চারচাকার গাড়িতে বেলিলিয়াস রোডের পাশে অশ্বিনী কুমার মণ্ডল রোডের একটি লোহার কারখানার সামনে আসে চার দুষ্কৃতী। তাদের মধ্যে একজন গাড়িতেই বসেছিল। বাকি তিনজন গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ গল্পগুজব করে। বেশ কিছক্ষণ পর কারখানার সামনে লোহার গেট দিয়ে তিনজন ভিতরে ঢুকে যায়। গাড়িটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে।
[আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়া পড়ুয়াদের পালটা, ‘আল্লাহু আকবর’ সুর চড়ালেন মুসলিম ছাত্রী]
ওই কারখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা গিয়েছে, তিন দুষ্কৃতীর মধ্যে দু’জন দু’টি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কারখানার ভিতরে অফিসে ঢুকে যায়। বাকি দু’জন বাইরেই অপেক্ষা করছিল। যে দুই দুষ্কৃতী ভিতরে ঢুকে কারখানার মালিক সুনীল শর্মার উপর চড়াও হয়। কারখানার মালিক সুনীল শর্মা বলেন, “তিন দুষ্কৃতী এসেছিল। দু’জন আমার অফিসে ঢুকে পড়ে। একজন বাইরে দাঁড়িয়েছিল। তার পর আমাকে বোমা ও রিভলভার দেখিয়ে খুন করার হুমকি দেয়। আমার হাত-পা মুখ বেঁধে ফেলে। শেষে প্রায় ১ কোটি টাকা ছিনতাই করে চম্পট দেয় তারা।”
কারখানার এক কর্মচারী সুকুমার দাস জানালেন, মালিকের অফিস ঘর থেকে দু’জনকে ছুটে পালাতে দেখে তাঁরা অফিস ঘরে যান। দেখেন, সুনীলবাবু তাঁর হাত-পা মুখ বাঁধা অবস্থা থেকে খুলছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরেই ওই কারখানার ও আশপাশের কারখানার কর্মচারীরা গাড়িটির পিছনে ধাওয়া করেন। চারজন গাড়িতে চেপে চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়িটা বেলিলিয়াস রোডের যানজটে আটকে যাওয়ায় চার যুবক গাড়ি থেকে নেমে ছুটতে থাকে। তার পরই বড় রাস্তার পাশের একটি গলির ভিতর ঢুকে সেখান থেকে মিলিয়ে যায়।
[আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়া পড়ুয়াদের পালটা, ‘আল্লাহু আকবর’ সুর চড়ালেন মুসলিম ছাত্রী]
প্রসঙ্গত, মধ্য হাওড়ার বড় কারখানা এলাকা বলে পরিচিত এই ব্যাঁটরার কদমতলা। সেখানে দিনে দুপুরে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল তা ভেবে পাচ্ছেন না পুলিশ থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিন ঘটনার খবর পাওয়ার পরই হাওড়া সিটি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পদস্থ কর্তারা ব্যাঁটরা থানায় ছুটে আসেন। কারখানার মালিক সুনীল শর্মা -সহ কর্মচারীদের থানায় নিয়ে এসে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে করা হচ্ছে দুই বন্ধুর মধ্যে ব্যবসায়ীক কোনও শত্রুতার জেরেই এমন ঘটনা ঘটেছে। সুনীল শর্মার কোনও এক বন্ধু কলকাতায় লোহার ব্যবসা করেন। সেই ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও লেনদেন এদিন হাওড়ার কদমতলায় হওয়ার কথা ছিল। তবে ঠিক কী হয়েছিল ও কী কারণে এমন হয়েছিল তা আরও বিস্তারিত তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।