সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের ওভাল-বিপর্যয়ের ক্ষতে এখনও প্রলেপ পড়েনি। প্রশ্নের মুখে ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক রোহিত শর্মাও (Rohit Sharma) সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত। এরকম পরিস্থিতিতে ‘হিটম্যান’-এর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর ছেলেবেলার কোচ দীনেশ লাড (Dinesh Lad) বলছেন, ”রোহিত, সামনে বিশ্বকাপ। ব্যর্থতা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দাও। বিশ্বকাপ ঘরে তুলতে পারলে ব্যর্থতার ইতিহাস ধুয়ে মুছে যাবে।”
গুরুর কথার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে ছাত্রের গলাতেও। রোহিত বলেছেন, ”অক্টোবরে যখন বিশ্বকাপ শুরু হবে, তখন একেবারে অন্যভাবে খেলব আমরা। ক্রিকেটারদের নিজের মতো করে পারফর্ম করার স্বাধীনতা দেওয়া হবে।”
[আরও পড়ুন: সিটিকে ‘ত্রিমুকুট’ দেওয়ার পরেও গুয়ার্দিওলার ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা]
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের বল গড়াতে এখনও কিছু সময় বাকি। টেস্ট ফাইনালে (WTC Final) হারের জেরে শোকে মূহ্যমান দেশ। হারের কারণ খোঁজা হচ্ছে। রোহিতের দিকে উড়ে আসছে প্রশ্ন। ওয়াঘার ওপারেও ভারত অধিনায়কের পারফরম্যান্স নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার বাসিত আলি বলেছেন, ধার কমেছে রোহিতের ক্রিকেটে।
নিন্দিত ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়ে দীনেশ বলছেন, ”খেলতে নেমে সবাই জিততেই চায়। ব্যক্তিগত দক্ষতা দিয়ে সবসময়ে ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। টেস্ট ফাইনাল মনে করে দেখুন। ট্র্যাভিস হেড খুব পজিটিভ ইনিংস খেলেছে। হেড আগে আউট হয়ে গেলে ভারতই তো ম্যাচের দখল নিয়ে নিত। ব্যাট করতে নেমে অজিঙ্কে রাহানে আর শার্দূল ঠাকুরের পার্টনারশিপ ভারতকে টেনে তুলছিল। রাহানে আউট হয়ে গেল। কিছু পরে শার্দূলও ফিরে গেল। দু’ জনে আরও কিছুক্ষণ থেকে গেলে রান আরও বাড়ত।” টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনের খেলা। নানাধরনের ঘটনা ঘটে। ছবিও বদলে যায় মুহূর্তে মুহূর্তে। সেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন দীনেশ।
ওভাল টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৫ রান করেন রোহিত। দ্বিতীয় ইনিংসে ‘হিটম্যান’-এর নামের পাশে লেখা ৪৩। চল্লিশ করার পরে রোহিতের ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিতও। আইপিএলেও ছাপ ফেলার মতো খেলেননি মুম্বই ই্ডিয়ান্স অধিনায়ক। আইপিএলে ৩৩২ রান করেছেন। ‘গেল গেল’ রব উঠেছে রোহিত শর্মার ব্যাটিং ফর্ম দেখার পরে। ছাত্রের হয়ে ব্যাট ধরলেন দীনেশ।বললেন, ”সব ক্রিকেটারেরই খারাপ সময় যায়। তাতে রোহিত শর্মা কি খারাপ ব্যাটসম্যান হয়ে গেল? ও ক্রস খেলতে গিয়ে আউট হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ ক্রিজে ছিল রোহিতকে দেখে মনে হয়নি খারাপ ব্যাট করেছে।”
প্রাক্তন ক্রিকেটাররা প্রশ্ন তুলেছেন, অতিরিক্ত আইপিএল খেলার প্রভাব পড়েছে ভারতের খেলায়। টেস্ট ক্রিকেট আর আইপিএলের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। রোহিতের কোচ বলছেন, ”রোহিত-বিরাট কোহলি এরা সবাই টেকনিক্যালি খুব ভাল। শুভমান গিল সেঞ্চুরি করল, তা দেখে কেউ কি বলবে বাজে শট খেলেছে গিল? পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার জন্য ওদের খুব বেশি সময়ের দরকার পড়ে না। টেকনিকের দিক থেকে দুর্দান্ত একজন টেস্ট ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও ভাল খেলতে পারে। দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু একজন টি-টোয়েন্টি প্লেয়ার টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না।”
এখানেই শেষ নয়। প্রশ্ন উঠছে আরও। দু’ মাস আইপিএল খেলে দেরিতে বিলেতে পৌঁছেছে ভারত। লাল বলে টেস্ট ফাইনাল হয়েছে। সেখানে সাদা বলে আইপিএল খেলেছেন রোহিত শর্মারা। আরও আগে পৌঁছলে ওভালে হয়তো ভরাডুবি ঘটত না। দীনেশ বলছেন, “আমরা তো আগে পৌঁছতেই পারলাম না। আরও ১০-১৫ দিন আগে গেলে ফল হয়তো অন্যরকম হত। লাল বল সুইং করে বেশি। ব্যাটসম্যানকে শট তৈরি করে খেলতে হয়। সাদা বলে ওত পরিশ্রম করার দরকার পড়ে না।”
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের প্রথম দিন থেকেই তোপের মুখে ভারত অধিনায়ক। ফাইনালের শেষেও একই অবস্থা। ছাত্রের দুঃসময়ে এগিয়ে এলেন গুরু। ভারত অধিনায়কের দিকে ধেয়ে আসা বাউন্সার ‘হুক’ করলেন দীনেশ লাড।