দেবব্রত মণ্ডল, ক্যানিং: কিছুতেই ধরা নাহি দিব! খানিকটা এমনই কী হাবভাব শার্দূলরাজের? মানবপ্রযুক্তিতে তৈরি রেডিও কলার (Radio Collar) পরিয়ে তাকে যতই বাঁধার চেষ্টা করা হোক না কেন, প্রযুক্তির চোখকে ফাঁকি দিয়ে আপাতত ধাঁ ভারতের একমাত্র রেডিও কলার পরানো বাঘ।
শেষ সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছিল বাংলাদেশের তালপট্টির জঙ্গলে। সেটা মে মাসের ১১ তারিখ। তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ মিলছে না দক্ষিণরায়ের। মিলছে না রেডিও কলারের সিগন্যাল। ফলে বাঘটির অবস্থা নিয়ে যারপরনাই চিন্তায় বনদপ্তর। সেটির মৃত্যু হয়েছে, না কি রেডিও কলারে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেই সিগন্যাল মিলছে না, তা নিশ্চিত না হওয়া ইস্তক চিন্তায় রয়েছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। রেডিও কলার ছিঁড়ে পড়ে গিয়েছে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের (Royal Bengal Tiger) গতিবিধি জানতে ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর হরিখালি বিটের হরিণভাঙা জঙ্গলে সাত বছর বয়সি একটি পুরুষ বাঘের গলায় রেডিও কলার পরানো হয়। রেডিও কলারের মাধ্যমে জঙ্গলে বাঘের গতিবিধি জানতে পারে বন দপ্তর।
[আরও পড়ুন: ‘জেলে নয়, গৃহবন্দি থাকতে চাই’, আদালতে আরজি ছত্রধর মাহাতোর]
সম্প্রতি সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কয়েকজন মৎস্যজীবী বাঘের হামলার মুখে পড়েন। কারও কারও প্রাণও যায়। এরপর বাঘের গতিবিধি জানতে বাঘের গলায় রেডিও কলার পরানোর উদ্যোগ নেয় বন দপ্তর। গতবছর রেডিও কলারটি সরবরাহ করে ডব্লুডব্লুএফ ইন্ডিয়া। মূলত মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি এই রেডিও কলার দুই থেকে তিন বছর কার্যকর থাকবে বলে জানানো হলেও সুন্দরবনের নোনা জলের কারণে এটি খুব বেশি হলে দেড় বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে মনে করে বন দপ্তরের। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০০৮ ও ২০১৬ সালে একাধিক বাঘকে রেডিও কলার পরানো হয়েছিল। কিন্তু সুন্দরবনের নোনাজলের কারণে সেটি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। বাঘেরা নদী ও খাড়িতে সাঁতার কাটার কারণে নোনাজলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে খবর, রেডিও কলার থেকে সর্বশেষ সিগন্যাল পাওয়া যায় গত মাসের ১১ তারিখে। যে এলাকা থেকে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছিল, সেটি মূলত বাংলাদেশের তালপট্টির জঙ্গল বলেই পরিচিত। বাঘটি বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবনের জঙ্গলে ছিল। এ বিষয়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অতিরিক্ত ফিল্ড ডিরেক্টর সৌমেন মণ্ডল বলেন, “রেডিও কলার লাগানো বাঘটির সিগন্যাল পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগেও আমরা সুন্দরবনে রেডিও কলার বিকল হয়ে যাওয়া বাঘের সন্ধান পাই। দেখা যায়, বিকল হয়ে যাওয়া রেডিও কলার নিয়েই তারা সুস্থভাবে জঙ্গলে জীবন যাপন করছে। এক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ভারতীয় বাঘ বাংলাদেশে ঢুকে পড়া বা বাংলাদেশের বাঘ ভারতের অংশে প্রবেশের ঘটনা নতুন নয়। ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গলের মধ্যে কোন বেড়া না থাকার কারণেই বন্যপ্রাণীরা অবাধে যাতায়াত করতে পারে এক মজঙ্গল থেকে অন্য ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে। এক্ষেত্রেও তেমনই ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।