সৈকত মাইতি, তমলুক: এবার কৌটো নাড়িয়ে চাঁদা তোলার দিন শেষ হতে চলেছে বামেদের! অর্থসাহায্যের আর্জি কম সময়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সোশাল মিডিয়ায় ভালো সাফল্য পেল সিপিএম। নির্বাচনে বিপুল খরচের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে ফেসবুকে আবেদন জানালেন তমলুকের বামপ্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ইউপিআই কোড ব্যবহার করে ছোট-বড় যে কোনও ধরনের অর্থসাহায্য চেয়েছেন তিনি।
প্রার্থীর ডাকে সাড়া দিয়ে শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অর্থাৎ মাত্র ৫ ঘন্টার মধ্যে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উঠে আসে বামেদের ঝুলিতে। আর তাতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন বামকর্মী সমর্থকরা। দেখা গিয়েছে, প্রায় ১০ হাজার জন দলটিকে অর্থসাহায্য করেছে। কেউ দিয়েছেন ৫ টাকা, কেউ ২০ টাকা, কেউ ২০০ তো কেউ ৫ হাজার টাকা। বামেদের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিক, বেকার যুবক, ছাত্র থেকে গৃহবধু সাধ্যমত সাহায্য পাঠিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: বহরমপুরের দাঁড়িয়ে অধীর নিয়ে টুঁ শব্দ নয়! শুধু তৃণমূলকে নিশানা নাড্ডার]
উল্লেখ্য, নির্বাচনী খরচ মেটাতে বাম নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিন ধরেই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কিংবা বাজারে এলাকায় সাধারণ মানুষজন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কৌটো নাড়িয়ে চাঁদা তোলার ছবি নতুন কিছু নয়। কিন্তু বর্তমানে কর্মীর অভাবে চাঁদা সংগ্রহ যথেষ্টই কমে এসেছে। ভাঁড়ারে টান পড়ায় এবার তাই নতুন পন্থা বেছে নিয়েছেন তাঁরা। দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। যদিও সে ক্ষেত্রে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা নিয়ে রীতিমতো বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অর্থসাহায্যের আবেদন জানালেন সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাপ্ত ও খরচ করা টাকার হিসেব এই সোশাল মিডিয়াতেই ভোটের পরে আপলোড করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনী খরচ সামলাতে বুথে-বুথে দলীয় কর্মী সমর্থকদের নতুন করে সক্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাড়ি-বাড়ি অর্থ সংগ্রহ করে প্রতি বুথ কমিটিকে উচ্চতর লোকসভা কমিটি এবং বিধানসভা কমিটিকে ৬০০ এবং ৩০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অঞ্চল কমিটি কিংবা বুথ কমিটি নিজেদের বুথের খরচ হিসেবে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে ভোটে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। তিনি বলেন, "ওদের মত আমাদের কোটি-কোটি টাকা নেই। জনগণের এই টাকায় পোস্টার ব্যানার, ফ্লেক্স-সহ নির্বাচনী যাবতীয় খরচ মেটানো হবে।"
[আরও পড়ুন: বামেরা ক্ষমতায় এলে দ্বিগুণ হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার! ভোটপ্রচারে সৃজনের মন্তব্য নিয়ে শোরগোল]
প্রার্থী বলেন, "বামপন্থীদের কোনও চিটফান্ড কিংবা ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকা নেই। তাই নির্বাচনী বিপুল খরচ মেটাতে সাধারণ মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলাম। সোশাল মিডিয়ায় সাধারণ মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যে যেমন পেরেছে তেমন অর্থসাহায্য করেছেন। আর তাতেই মাত্র পাঁচ ঘন্টায় প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা উঠেছে। জনগণের দেওয়া এই অর্থেই আমাদের নির্বাচনের লড়াই চালিয়ে যাব। কারণ সিপিএম চুরির টাকায় দল চালায় না। মানুষের সাহায্য সহযোগিতাতেই এই লড়াইটা আমরা লড়তে চাই। এবং প্রত্যেক টাকার হিসাব এই স্যোসাল মিডিয়াতেই ভোটের পরে আপলোড করে দেব। কারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ মানুষকে দিতেই হয়।"