ধীমান রায়, কাটোয়া: কালনার পর কাটোয়া। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চরম হেনস্তার শিকার গোটা পরিবার। স্কুলশিক্ষকের বাড়ি থেকে উদ্ধার সুইসাইড নোট। স্ত্রী জানতে পারায় প্রাণ বেঁচেছে তাঁর। কাটোয়া থানায় সুদের কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের। এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্কুলশিক্ষক অনিমেষ সরকার কাটোয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে হরিসভা পাড়ার বাসিন্দা। গত ২০১৯ সালে চড়া সুদে পাঁচ লক্ষ ধার নেন তিনি। অসুস্থ বাবার চিকিৎসায় সে টাকা কাজে লাগান। মাঝে আরও টাকার প্রয়োজন হয়। একাধিক সুদের কারবারির থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন অনিমেষ। প্রতি মাসে সুদের টাকা ফেরত দেন বলেই দাবি তাঁর। তবে বর্তমানে দেখা গিয়েছে আসল শোধ হয়নি এতটুকুও।
[আরও পড়ুন: অস্ত্রোপচার নয়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কালনা হাসপাতালে একসঙ্গে ৩ সন্তানের জন্ম দিলেন বধূ]
অভিযোগ, ওই টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে সুদের কারবারিরা। স্কুলশিক্ষকের স্ত্রী, সন্তানকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত গোটা পরিবার। পরিস্থিতি এমনই চরম পর্যায়ে পৌঁছয় যে বাড়িতে সুইসাইড নোটও লিখে রেখেছিলেন স্কুলশিক্ষক। ওই সুইসাইড নোটটি দেখে ফেলেন স্কুলশিক্ষকের স্ত্রী। এরপরই পুলিশের দ্বারস্থ হন দম্পতি। কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত। মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তার মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা হল পীযূষকান্তি দে, সন্দীপ কোনার, চঞ্চলকুমার দে ও মৃণালকান্তি দে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে বলেই জানান এসডিপিও কৌশিক বসাক।
উল্লেখ্য, করোনাকালে সকলের আয় কিছুটা কমে গিয়েছিল। সাময়িক দিনযাপনের জন্য চড়া সুদে টাকা ধার নিয়েছেন অনেকেই। পরে ফেরত দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে তাঁদের। হুমকি, মারধর এমনকী সুদের কারবারিদের বিরুদ্ধে উঠেছে জোর করে সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগও। বছরখানেক আগে স্বামী-স্ত্রীর আত্মহত্যার নেপথ্যেও চড়া সুদে টাকা ধারের তত্ত্ব সামনে এসেছিল। কাটোয়ায় সুদের কারবারিদের বিরুদ্ধে ওঠে এক ব্যক্তির উপর নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ। মারধরের পর রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে। ট্রেনের ধাক্কায় শেষমেশ পা-ও হারান ওই ব্যক্তি। তা নিয়ে শোরগোল কম হয়নি। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কাটোয়ায় সুদের কারবারির পর্দাফাঁস।