সুমিত বিশ্বাস ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: SIR শুনানিতে সময়মতো পৌঁছতে পারবেন তো? শুনানির চিঠি পাওয়ার পর থেকে হতাশার পাশাপাশি এই চিন্তাও গ্রাস করেছিল পুরুলিয়ার ৮২ বছরের বৃদ্ধ দুর্জন মাঝি। সোমবার, শুনানির নির্দিষ্ট দিনে ব্লক অফিসে যাওয়ার আগে টোটো খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। তারপর আর ফেরেননি। ঘণ্টা তিনেক পর বাড়ির অদূরে রেললাইন থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ।এনিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল।
বাড়ির অদূরে আনাড়া-রুকনি রেললাইন থেকে উদ্ধার দুর্জন মাঝির মৃতদেহ। নিজস্ব ছবি।
পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল আনাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌতালাা গ্রামের বাসিন্দার। যথাযথভাবে এনুমারেশন ফর্মও ফিলআপ করেছিলেন। কিন্তু তারপরও শুনানির ডাক আসায় হতাশাগ্রস্ত ছিলেন দুর্জন। এরপর নির্ধারিত দিনে তাঁর নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সময়মতো শুনানি কেন্দ্রে পৌঁছতে পারবেন কি না। এসবের জেরেই প্রাণ গেল তাঁর। খবর জেনে পুরুলিয়া জেলার টিএমসিপি সভাপতি কিরীটি আচার্য, ব্লক সভাপতি মনোজ সাহা তাঁর বাড়িতে যান। অকারণে বৃদ্ধকে হয়রানের অভিযোগ তুলে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হতে চলেছে পাড়া থানায়।
জানা গিয়েছে, হতদরিদ্র পরিবার দুর্জন মাঝির। বয়স ৮২ হলেও এখনও বেশ শক্তপোক্ত ছিলেন বৃদ্ধ। এসআইআর শুরুর পর আর পাঁচজনের মতোই তিনিও এনুমারেশন ফর্ম ফিলআপ করেছিলেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নামও ছিল। তা সত্ত্বেও ২৫ ডিসেম্বর শুনানির নোটিস আসে তাঁর কাছে। জানানো হয়, সোমবার দুপুর ১টায় পাড়া ব্লক অফিসে যেতে হবে শুনানির জন্য। তারপর থেকেই মনমরা গয়ে গিয়েছিলেন দুর্জন। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছিলেন না।
এরপর সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ দুর্জন বাড়ির সদস্যদের জানান, তিনি একটি টোটো ডাকতে যাচ্ছেন। বাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ব্লক অফিসে পৌঁছতে টোটোই ভরসা বৃদ্ধ দুর্জনের। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েন। খবর পান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি কিরীটি আচার্য। তিনি খোঁজ শুরু করে। দুর্জনের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই আনাড়া-রুকনি রেলট্র্যাক থেকে উদ্ধার হয় বৃদ্ধের মৃতদেহ।
মৃতের বাড়িতে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা নেতৃত্ব। নিজস্ব ছবি।
খবর পেয়েই দুর্জনের বাড়িতে যান কিরীটি আচার্য, ব্লক তৃণমূল সভাপতি মনোজ সাহা, জেলা সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম থাকা, এনুমারেশন ফর্ম ফিলআপ করা সত্ত্বেও কেন একজন বৃদ্ধকে এভাবে শুনানিতে ডাকা হল? হয়রানির উদ্দেশেই এই ডাক। এনিয়ে পাড়া থানায় সরাসরি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
