সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টিকে থাকার এক ও একমাত্র শর্ত হলো বিবর্তন। ডারউইন তত্ত্ব অনুযায়ী, পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারলেই পৃথিবীতে টিকে থাকা যাবে, নচেৎ একেবারে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়াই ভবিতব্য। এই তত্ত্ব অনুসারে পৃথিবীতে কিছু কিছু প্রাণী, উদ্ভিদ যুগের পর যুগ ধরে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে। আবার কিছু প্রজাতি হারিয়ে গিয়েছে বিলুপ্তির অতলে। হেলায় জঙ্গলে বড় হওয়া বাঁশ হলো প্রথম প্রজাতির অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে।
সম্প্রতি মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকায় পাওয়া বাঁশের জীবাশ্ম পরীক্ষানিরীক্ষা করে গবেষকরা জানাচ্ছেন, তিন হাজার ৭০০ বছর আগেকার ওই জীবাশ্মেই প্রমাণ, বাঁশ ছিল তুষার যুগেও। ধীরে ধীরে পৃথিবীর কোনও কোনও অংশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্ত ও মায়ানমার এলাকার আবহাওয়ার কারণে এই অংশে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
মণিপুরের চিরাং নদীর তীরে পাওয়া বাঁশের জীবাশ্ম।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের আওতায় মণিপুরের বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অফ পেলিওসায়েন্সেস। এই শাখায় মূলত প্রাগৈতিহাসিক, বিবর্তনবাদের চর্চা হয়ে থাকে। সেই কাজের জন্য একদল গবেষক মণিপুরের বিখ্যাত চিরাং নদীর তীরে কিছু নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। যা পেলেন, তা তো একেবারে অমূল্য রতন! নদীর তীরে পাওয়া গেল পলিসমৃদ্ধ বাঁশের জীবাশ্ম, যা কিনা বেশ বিরল। আর সেখানেই বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। অত যুগ আগে পৃথিবীতে যখন তৃণভোজী প্রাণীদের দাপট, তখন থেকে তাদের ক্ষুধার শিকার না হয়ে কীভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখল বাঁশগাছ? এর উত্তর থেকেই মিলবে এশিয়ায় তুষার যুগের স্পষ্টতর এক চিত্র।
বিবর্তনবাদীদের মতে, বাঁশের জীবাশ্ম এমনিতে খুবই বিরল। আর তাই চিরাং নদীর ধারে যা পাওয়া গিয়েছে, তা একেবারে হাতে এসে পড়া ইতিহাসেরই শামিল। পরীক্ষানিরীক্ষা করে বিজ্ঞানীদের দাবি, ওই বাঁশ 'চিমোনোবাম্বুসা' প্রজাতির। প্রাচীন উদ্ভিদকুলের বিবর্তনও বাঁধা এই প্রজাতির বাঁশের হাতে। সেই 'চিমোনোবাম্বুসা' থেকে আজকের 'বাম্বুসা বাম্বোস'-এর পরিবর্তন বোঝা যাবে এর হাত ধরেই। বিজ্ঞানীদের মতে, ৩৭০০ বছরের পুরনো এই প্রজাতির বাঁশ যখন পৃথিবীতে ছিল, সেসময় ছিল তুষার যুগ। শুষ্ক, শীতার্ত পরিবেশ। এই আবহাওয়ার কারণে ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ থেকে বাঁশ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
এই জীবাশ্ম থেকে একাধিক তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
তাহলে ভারতে কীভাবে টিকে গেল বাঁশ? এরও একটা সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া যাচ্ছে বাঁশের জীবাশ্ম থেকে। বলা হচ্ছে, উত্তর-পূর্ব ভারত ও মায়ানমার লাগোয়া এলাকার আর্দ্র পরিবেশের কারণে ধীরে ধীরে বিবর্তনের চ্যালেঞ্জে জিতে যায় বাঁশ। বিশ্বখ্যাত 'জার্নাল রিভিউ অফ পেলিওবোটানি অ্যান্ড পেলিনোলজি'তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানা গিয়েছে, বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া বদলের জেরেই বাঁশের বিবর্তন ঘটেছে। তবে মণিপুর থেকে উদ্ধার বাঁশের জীবাশ্ম এই ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
