পার্থসারথি সিংহ: হেসে উঠবে আকাশ! আর সেই হাসিমুখ দেখার জন্য অপেক্ষায় আকাশপ্রেমীরা।
না কোনও গল্প নয়। এ এক মহাজাগতিক বিরল দৃশ্য। আর যার জন্য অপেক্ষা করতে হবে একটা দিন। আজ রাত পোহালেই আকাশের সেই 'স্মাইলি ফেস' দেখা যাবে কলকাতা টু ক্যালিফোর্নিয়া, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকেই। কারণ, আকাশে চাঁদ, শুক্র ও শনি পরস্পরের কাছাকাছি এসে এমন একটি অবস্থানে আসবে যাতে মনে হবে আকাশ যেন হাসছে। ঠিক যেন মোবাইলের ইমোজি। 'স্মাইলি ফেস'। নাসার সোলার সিস্টেম অ্যাম্বাস্যাডর ব্রেনডা কালবার্টসনের এই তথ্যে ব্যাপক খুশি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। রাতের আকাশে চোখ রাখা যাঁদের নেশা, তাঁরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ২৫ এপ্রিলের জন্য। অপেক্ষায় বিজ্ঞানী মহল।
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে....
কেমন হবে সেই ‘স্মাইলি’? চাঁদের মাথায় উঠবে শুক্র-শনি। এই দুই গ্রহ সেদিন এমনভাবে নিজের কক্ষপথে চলে আসবে যে তারা ঠিক চাঁদের মাথার উপর দিকে দু'কোনায় থাকবে। ফলে এই দুটি গ্রহকে চোখের মতো দেখা যাবে। পাশাপাশি চাঁদ সেদিন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে না। তাই দেখে মনে হবে আকাশের 'স্মাইলি'। চাঁদ, শুক্র ও শনির এই অবস্থান হাসিমুখের সৃষ্টি করবে ৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন চাঁদ পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝখানে থাকে তখন হয় অর্ধচন্দ্র। ফলস্বরূপ, চাঁদকে আংশিক দেখা যায়। অর্থাৎ সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত হয়। খালি চোখেও চাঁদের এই অংশটি তখন অদ্ভুত সুন্দর লাগে। চাঁদের এই অংশটি অন্য দু’টি উজ্জ্বল গ্রহের সঙ্গে দেখা যাওয়ার কারণে এই আকৃতির সৃষ্টি হয়েছে। যাকে ‘স্মাইলি ফেস’ বলা হচ্ছে। মন ভালো করা এই দৃশ্য তাই অতি বিরল। নাসার খবর জানিয়ে, লাইভ সায়েন্সের একটি রিপোর্ট এই মহাজাগতিক ঘটনাকে তাই বলছে বিরল ট্রিপল প্ল্যানেটারি কনজাংশন বা একটি ত্রিসংযোগ। জানা গিয়েছে, শুক্র থাকবে পূর্ব দিগন্তের উপরের দিকে। শনি থাকবে সামান্য নিচে। এবং তার নিচে ও একটু উত্তরে থাকবে পাতলা অর্ধচন্দ্র। সেই পাতলা চাঁদই যেন একটি ‘স্মাইলি ফেস’। চাঁদের হাসিমুখ। যা একটি ত্রিভুজাকার বিন্যাসে দৃশ্যমান হবে।
আর বিরল মহাজাগতিক মুহূর্তের সাক্ষী হবে পৃথিবী।
কখন, কোথায়, কীভাবে?
এখনও পর্যন্ত ভোর সাড়ে ৫টাকেই আদর্শ সময় হিসাবে ধরে চলছেন বিজ্ঞানীরা। এর এক ঘণ্টা পর সূর্যোদয় হবে। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা আগেই দেখা দেবে হাসিমুখ। নাসা বলছে, ২৪ রাত পেরিয়ে ২৫ এপ্রিল ভোরে পূর্ব দিগন্তে ওই দেখা যাবে ওই ‘স্মাইলি’। খালি চোখেই বোঝা যাবে। তবে টেলিস্কোপ থাকলে একেবারে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে শুক্র এবং শনি। টেলিস্কোপ থাকলে চাঁদের নিচে বুধকেও দেখা যেতে পারে বিন্দুর আকারে। তবে দিগন্তের একেবারে নীচের দিকে অবস্থান করলে, সব জায়গা থেকে বুধকে দেখা নাও যেতে পারে। আকাশে সূর্য ওঠার একঘণ্টা আগে দেখা যাবে এই ছবি। সূর্য উঠে গেলে আর দেখা যাবে না। এর মেয়াদ হবে তাই মাত্র একঘণ্টা। শুক্র এবং শনি গ্রহকে অনেক উজ্জ্বল হিসাবে দেখা যাবে। নাসার সোলার সিস্টেম অ্যাম্বাস্যাডর ব্রেনডা কালবার্টসনের কথায়, “শুক্রবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে পূর্ব আকাশে এই ‘হাসিমুখ’ দেখা যাবে এবং সূর্যোদয় ঘটবে প্রায় এক ঘণ্টা পর। এই দৃশ্য দেখতে হলে পূর্ব আকাশ পরিষ্কারভাবে দেখার সুযোগ থাকতে হবে। এমন জায়গা বেছে নেওয়া যেখান থেকে আকাশের পূর্ব দিকটা ভালো করে দেখা যায়। ভোররাতে, সূর্য ওঠার ঠিক আগে সব থেকে ভালো ভাবে এই হাসি মুখ বোঝা যাবে। আর প্রায় ১৬ বছর আগের একটি ছবিতে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। সোশাল মিডিয়াতে নাসার খবরে পোস্ট করা এক নেটাগরিকের ছবিতে স্পষ্ট সেই হাসিমুখ।
ট্রিপল কনজাংকশন
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় কনজাংকশন মানে, দুই বা ততোধিক মহাজাগতিক বস্তুকে আকাশে খুব কাছাকাছি অবস্থানে দেখতে পাওয়া। যখন তিনটি বস্তুর একত্রে সংযোগ ঘটে, তখন সেটি হয় ট্রিপল কনজাংকশন। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সৌরজগৎ বিশেষজ্ঞ ব্রেন্ডা বলছেন, শুক্র, শনি এবং চাঁদের অবস্থানের কারণেই এই দৃশ্য সৃষ্টি হবে। আর আকাশের এই হাসিমুখের সাক্ষী থাকবেন আপনিও। আর পাহাড় বা উঁচু জায়গা থেকে সবচেয়ে ভালো দেখতে পারবেন এই দৃশ্য। ছবি তোলার জন্য আঁধার কেটে ভোর হওয়ার মুখের সময়টিই সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মত মহাকাশপ্রেমীদের। তাঁদের মতে, ওই সময় আস্তে আস্তে নক্ষত্রগুলি আড়াল হতে শুরু করে। শুধুমাত্র গ্রহগুলি বোঝা যায়। তাই বিজ্ঞানী থেকে আম জনতা, এখন আকাশের হাসিমুখ দেখার অপেক্ষায় সবাই।
