বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: হাতির উপদ্রব ছিলই। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়েছে চা বাগানে বিড়ালের মতো ঘুরে বেড়ানো চিতাবাঘ। ওই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন চা বাগান কর্তৃপক্ষ। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বনদপ্তরের দ্বারস্থ হচ্ছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। কেন উদ্বেগ বাড়বে না! ইতিউতি চিতাবাঘ ঘুরে বেড়াতে দেখে শ্রমিক মহলে আতঙ্ক চরমে পৌঁছেছে। সুযোগ পেলে বাড়ির গবাদি পশু, হাস-মুরগি তো বটেই। বৃদ্ধ থেকে নাবালক যাকে কাছে পাচ্ছে ঘাড় মটকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
২৭ আগস্ট আলিপুরদুয়ারের জটেশ্বর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক বৃদ্ধাকে তুলে নিয়ে মুন্ডু ধর থেকে আলাদা করে দেওয়ার ঘটনা কেউ ভোলেনি। ৫ অক্টোবর আলিপুরদুয়ার জেলার তাসাটি চা বাগানে এক নাবালককে টেনে নিয়ে যায় চিতাবাঘ। এছাড়াও তো রয়েছে চা বাগানে কাজের সময় আচমকা থাবা বসানোর ঘটনা। ২ ডিসেম্বর কালচিনি ব্লকের চুয়াপাড়া চা বাগানে মহিলার কাধে থাবা বসানোর ঘটনা আছে। সর্বশেষ ৫ ডিসেম্বর মাল ব্লকের ডামডিম চা বাগান সংলগ্ন নিচু বাজার এলাকায় বাছুর মেরে খেয়ে পালায় চিতাবাঘ। চলতি বছরে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৩০টি চিতাবাঘের হামলার ঘটনা রয়েছে। জখম হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। এর বেশিরভাগ ঘটেছে চা বাগানে। মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
[আরও পড়ুন: ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’, মকাইবাড়িতে শ্রমিকদের সঙ্গে চা পাতা তুললেন মুখ্যমন্ত্রী]
লোকালয়ে বাড়িতে ঢুকে চিতাবাঘের বড় হামলার ঘটনা এবছর ঘটেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর জটেশ্বর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দলগাঁওবস্তি এলাকায়। বাড়িতে ঢুকে তিনজনের উপরে হামলা চালায় শ্বাপদ। এর আগে ১২ মার্চ শিলিগুড়ি লাগোয়া সুকনা জঙ্গলে গরু চড়াতে গিয়ে চিতাবাঘের হামলায় জখম হয় ৩ জন। কাজ সেরে বাগানের পাশ দিয়ে বাইকে যাওয়ার সময়ও হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। ১৪ মার্চ জলপাইগুড়ির মেটেলি ব্লকে চলন্ত স্কুটারে চিতাবাঘের হামলায় মৃত্যু হয় এক চা শ্রমিকের। একই ঘটনা ঘটে ১৬ অক্টোবর ডুয়ার্সের দলগাঁও চা বাগানের কাছে ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে। চলন্ত বাইকে হামলা চালায় শ্বাপদ। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে চা শ্রমিকদের অনেকে কাজে যেতে চাইছে না। বেগতিক পরিস্থিতি দেখে চা বাগান কর্তৃপক্ষ বনদপ্তরের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “চা গাছ ছাটার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি রীতিমতো বিপজ্জনক হয়েছে। এতদিন হাতির ভয়ে ছিলাম। এবার চিতাবাঘ। বনদপ্তরের কর্তাদের অনুরোধ করবো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।” চা বাগান শ্রমিকদের একাংশ জানান, প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে চিতাবাঘের উপদ্রব দেখা যায়। যদিও এখন বছরভর সেটা চলছে। একটু অসতর্ক হলেই বিপদে পড়তে হচ্ছে। কয়েক মাসে চিতাবাঘের উপদ্রব উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে ডুয়ার্সের লক্ষ্মীপাড়া, সোনগাছি, মোরাঘাট, দলগাও, মেটেলি, তাসাটি, সিংহানিয়া, বীরপাড়া, সাইলি, বাতাবাড়ি, ভগতপুর চা বাগান এলাকায়। একই পরিস্থিতি হয়েছে শিলিগুড়ির বাগডোগরার কাছে তাইপু চা বাগান, ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, শালুগা়ড়া এলাকায়। চা বাগান মালিক পুরণজিৎ বক্সি গুপ্ত বলেন, “একদিকে হাতি অন্যদিকে চিতাবাঘ। আমরা কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না।” ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক গোপাল প্রধান বলেন, “শ্রমিকরা রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।” বনদপ্তরের কর্তারা অবশ্য জানান, প্রতিটি রেঞ্জ অফিসকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে খাচা বসানো হচ্ছে।