দেবব্রত মণ্ডল: দক্ষিণরায়ের ছবি তোলার জন্য জঙ্গল কেটে সাফ করে মাংসের টুকরো একটি কাঠের দণ্ডের মাথায় বেঁধে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ধরনের রাসায়নিক। মাংসের সঙ্গে এই রাসায়নিকের মিশ্রণে তার দুর্গন্ধ এতটাই বেড়ে যায় যে, নদী পেরিয়ে তা পৌঁছে যায় এক জঙ্গল থেকে আরেক জঙ্গলে। বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকা সেই গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার চলে আসে সেই নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেই আগে থেকেই বসিয়ে রাখা হয় ট্র্যাপ ক্যামেরা। যে ক্যামেরাগুলি দিনে রাতে বাঘের ছবি তুলতে প্রস্তুত। কিন্তু এবার ক্যামেরায় দেখা গেল এক নতুন দৃশ্য।
বাঘের সঙ্গে সঙ্গে মাংসের লোভে উড়ন্ত বাজপাখি, এমনকী রাতের বেলায় প্যাঁচাও এসে কাঠের দণ্ডে লাগানো ওই মাংস খাচ্ছে ঠুকরে ঠুকরে! অর্থাৎ এই গন্ধ যে শুধু সুন্দরবনের জঙ্গলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে তাই নয়, তা বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে উপরের দিকেও। ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের জঙ্গলের বেশ কয়েকটি ট্র্যাপ ক্যামেরায় মাংস খাওয়া অবস্থায় বাজপাখির ছবি ধরা পড়েছে। দিনের বেলায় যেমন বাজপাখির ছবি ধরা পড়েছে রাতে ঠিক তেমনই ধরা পড়েছে নিশাচর পাখি প্যাঁচা। অর্থাৎ একথা বলাই যায় যে, জঙ্গলে বাঘের খাবারে ভাগ বসিয়েছে বাজপাখি আর প্যাঁচা। ফলে বনদপ্তরের আশঙ্কা, মাংসের লোভে ক্যামেরার কাছাকাছি বাঘ না আসায় ব্যাহত হতে পারে বাঘশুমারের প্রক্রিয়া।
সুন্দরবনে বাঘশুমারিতে বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরা পরীক্ষায় বনকর্মীরা। নিজস্ব ছবি।
উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে গোটা দেশের পাশাপাশি সুন্দরবনজুড়ে শুরু হয়েছে বাঘ গণনার কাজ। বাঘের ছবি তুলতে ১৪৮৪টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, মূলত ৪২ দিনের ক্যামেরা বসানোর এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ক্যামেরার ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হয়। তার সঙ্গে প্রতিটি ক্যামেরা ঠিকঠাক কাজ করছে কি না, তা দেখার জন্য কর্মীরা মাঝেমধ্যে জঙ্গলে গিয়ে সেগুলি পর্যবেক্ষণ করে আসেন। সেরকম ভাবেই ক্যামেরা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি ক্যামেরাতেই পর্যাপ্ত অন্যান্য প্রাণীর ছবি যেমন ধরা পড়েছে তেমনই ধরা পড়েছে বাজপাখি ও প্যাঁচার ছবি। যা সত্যিই একেবারে অভিনব।
পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, বাঘের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে প্যাঁচা, বাজের মতো সমস্ত শিকারী পাখি।
ক্যামেরা তুলে সমস্ত ছবি পর্যবেক্ষণের পর আরও পরিষ্কারভাবে সুন্দরবনের জঙ্গলে অন্যান্য প্রাণীর অবস্থান এবং বন্যপ্রাণী ও বিশেষ কিছু পাখির চরিত্র বোঝা সম্ভব হবে।
