shono
Advertisement

ট্রলারের তেল ও বর্জ্যে বিষাক্ত হচ্ছে মাছ-কাঁকড়া, উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা

মৎস্যজীবী ও সমুদ্রতটের কাছে থাকা বাসিন্দাদের সতর্ক করছে রাজ্য।
Published By: Tiyasha SarkarPosted: 12:48 PM Dec 25, 2025Updated: 12:48 PM Dec 25, 2025

অর্ণব আইচ: প্লাস্টিক আর পুরনো দড়ির টুকরো খাচ্ছে মাছ। সেই মাছ, কাঁকড়ার শ্বাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাদের শরীরে প্রবেশ করছে ট্রলার থেকে বের হওয়া তেল আর বর্জ্য। মাছ-কাঁকড়ার শরীর বিষাক্ত হচ্ছে। সেই মাছ, কাঁকড়া ট্রলার থেকে মৎস্যবন্দর হয়ে চলে আসছে বাজারে। আর না জেনেই তা খাচ্ছে মানুষ। তাই মৎস্যজীবী ও সমুদ্রতটের কাছে থাকা বাসিন্দাদের সতর্ক করছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। সতর্ক করছে রাজ্য সরকারও। এই ব্যাপারে পরিবেশবিদরাও শঙ্কিত।

Advertisement

এই সমস্যা বাংলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ থেকে শুরু করে ওড়িশার গোপালপুরেও। ওড়িশার পারাদ্বীপে উপকূলরক্ষী বাহিনী সমুদ্রে দূষণ দমনের মহড়া 'রিজিওনাল লেভেল পলিউশন রেসপন্স এক্সারসাইজ' চলাকালীন উত্তর-পূর্ব ভারতের আইজি (কোস্ট গার্ড) ইকবাল সিং চৌহান জানান, সামুদ্রিক মাছ প্লাস্টিক খাচ্ছে। এছাড়াও ট্রলার বাঁধার দড়ির টুকরো খেয়ে ফেলছে মাছ। মাছের পেটের ভিতর থেকে পাওয়া যাচ্ছে খুব ছোট প্লাস্টিকের অংশ। মানুষের পক্ষে এর ফল হতে পারে মারাত্মক। উপকূলরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরা জানান, সামুদ্রিক মাছ বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্য। বাংলা ও ওড়িশার উপকূল থেকে ধরা মাছ বিদেশেও রপ্তানি হয়। কিন্তু সমুদ্রকে দূষণমুক্ত করে দূষণহীন মাছ জোগান দিতে এগিয়ে আসতে হবে ট্রলারের মালিক ও মৎস্যজীবীদের। কারণ, দেখা যাচ্ছে ট্রলার থেকে ফেলা বর্জ্য, দড়ির টুকরো খেয়ে ফেলছে মাছ। সমুদ্রতটে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক। সেই প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে সমুদ্রে। অনেক সময় ট্রলার থেকেও গুটখা বা পান মশলার প্লাস্টিকের মোড়ক সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। মাছ খাবার মনে করে তা খাচ্ছে। আবার ঢেউয়ে ভেঙে ছোট টুকরো হয়ে যাওয়ার পরও তা যাচ্ছে মাছের পেটে।

অনেক সময় মাছ ধরার ট্রলার থেকে লিক করে তেল। অল্প পরিমাণ হলেও তা সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকে। মাছ বা চিংড়ি, কাঁকড়াদের শ্বাস নেওয়ার সময় তা তাদের শরীরে প্রবেশ করে। ক্রমে সেই দূষিত মাছ বা চিংড়ি, কাঁকড়া মৎস্যজীবীরাও না বুঝে সেগুলি ধরেন। মাছ খাওয়ার সময় তা প্রবেশ করে মানুষের শরীরে। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, তাঁদের শরীর খারাপ হওয়ার মূল কারণ এই সমুদ্র দূষণ। তাই বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকার ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে মৎস্যজীবী ও ট্রলার মালিকদের। ট্রলার মালিকদেরও বলা হচ্ছে, তাঁরাও যেন ভালভাবে জলযানগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করেন, যাতে সেখান থেকে তেল লিক না হয়। মৎস্যজীবীদের যেন তাঁরাও বলেন, সমুদ্রে কোনও ধরনের বর্জ্য না ফেলতে। একই সঙ্গে বিশেষভাবে সতর্ক করা হচ্ছে সমুদ্রতটের আশপাশের বাসিন্দাদেরও। তাঁরা যাতে সমুদ্র দূষণ রুখতে এগিয়ে আসেন আসেন, সেই অনুরোধ তাঁদের করা হয়। শঙ্কার কারণ আরও রয়েছে।

ওড়িশার পারাদ্বীপের সমুদ্রে দূষণ দমনের মহড়া 'রিজিওনাল লেভেল পলিউশন রেসপন্স এক্সারসাইজ' চলার সময় উপকূল রক্ষী বাহিনীর কর্তাদের চোখে পড়েছে ভাসমান সামুদ্রিক কচ্ছপের দেহ। উত্তর-পূর্ব ভারতের আইজি (কোস্ট গার্ড) ইকবাল সিং চৌহান জানান, সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, আগে বেশিরভাগ সময় উপকূলবর্তী এলাকায় রাতে ডিম পাড়তে আসত সামুদ্রিক কচ্ছপ। বালিতে ডিম পেড়ে ভোরে চলে যেত তারা। কিন্তু এখন দিনের বেলায় তারা সমুদ্রতটে ডিম পাড়তে আসছে। আর সেখানেই হচ্ছে সমস্যা। মৎস্যজীবীদের জালে আটকে যাচ্ছে কচ্ছপ। একবার আটকে গিয়ে বের হতে না পারলে 'আতঙ্কিত' হয়েই মৃত্যু হচ্ছে তাদের। উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্তাদের মতে, কূর্ম অবতারকে বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করতেই হবে 'টারটেল এক্সক্লুডার ডিভাইস' বা টিইডি। মৎস্যজীবীদের জালে এই ডিভাইসটি রাখলে কচ্ছপ বা ডলফিনের মতো বড় প্রাণীও জাল থেকে পালানোর রাস্তা খুঁজে পাবে। প্রাণে বেঁচে যাবে তারা। তাই কচ্ছপ বাঁচাতে ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের এই টিইডি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • প্লাস্টিক আর পুরনো দড়ির টুকরো খাচ্ছে মাছ। সেই মাছ, কাঁকড়ার শ্বাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাদের শরীরে প্রবেশ করছে ট্রলার থেকে বের হওয়া তেল আর বর্জ্য।
  • মাছ-কাঁকড়ার শরীর বিষাক্ত হচ্ছে। সেই মাছ, কাঁকড়া ট্রলার থেকে মৎস্যবন্দর হয়ে চলে আসছে বাজারে। আর না জেনেই তা খাচ্ছে মানুষ।
  • তাই মৎস্যজীবী ও সমুদ্রতটের কাছে থাকা বাসিন্দাদের সতর্ক করছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। সতর্ক করছে রাজ্য সরকারও। এই ব্যাপারে পরিবেশবিদরাও শঙ্কিত।
Advertisement