সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে মহাকাশ গবেষণার অন্ত নেই। এবার বিশ্বের তাবড় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নজরে নক্ষত্র সেরা সূর্য। সৌরজগতের অফুরন্ত শক্তিভাণ্ডার ঠিক কোন বিজ্ঞানের উপর দাঁড়িয়ে নিরন্তর পৃথিবীকে শক্তি সরবরাহ করে চলেছে, অনু-পরমাণুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াই বা কেমন, তা বুঝতে পৃথিবীতে বসেই গবেষণা শুরু করার ভাবনা বিজ্ঞানীদের। এসবের চেয়েও বড় কথা, এমন যুগান্তকারী একটি কাজের বড়সড় শরিক হতে চলেছে ভারত। সম্প্রতি ফ্রান্স সফরে গিয়ে এই বিষয়টি চূড়ান্ত করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় হবে এই মেগা প্রকল্পের। যার মধ্যে ১৭৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকছে ভারতের, যা মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ।
[আরও পড়ুন: গাছই ছড়াচ্ছে ক্যানসার! গুজবে নির্বিচারে আফ্রিকান মেহগনিতে কোপ]
কয়েক বছর আগে পদার্থবিজ্ঞানের বহুল আলোচিত গড পার্টিকলের অস্তিত্ব খুঁজতে ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ডের সীমান্তের ভূগর্ভস্থ গবেষণাগার সার্নে সে এক মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, একুশ শতকের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গবেষণা হতে চলেছে এই মিনি সূর্য। এর জন্য যে মেশিনটি বসানো হবে, সেই ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টরের ওজন ২৮ হাজার টন। সূর্যের শক্তি কীভাবে ফিউশন পদ্ধতিতে পৃথিবীতে আসে, সেটাই পরীক্ষামূলকভাবে বুঝতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা এবং পৃথিবীর মধ্যেই সূর্যকে স্থাপন করে। ফ্রান্স এবং ভারতের সঙ্গে এই মেগা প্রকল্পে হাত মিলিয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চিন, জাপান-সহ একাধিক দেশ। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী মার্ক হেন্ডারসন বলছেন, ‘আমরা স্বাভাবিক তাপমাত্রার এই পৃথিবীতেই সূর্যের উত্তাপ অর্থাৎ ১৫০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করব। সূর্যের একটি ঘূর্ণনে অন্তত ১০গুণ ফিউশনের শক্তি তৈরি হবে।’
এবার আসা যাক, এই প্রকল্পে ভারতের অবদান ঠিক কী। নরেন্দ্র মোদি এবং ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরোঁর মধ্যে যে কথা স্থির হয়েছে, সেই অনুযায়ী, প্রকল্পের সবচেয়ে বড় যন্ত্রাংশটিই দিচ্ছে ভারত। ৩৮০০ টনের একটি রেফ্রিজারেটর, যা রিঅ্যাক্টর তৈরির মূল অংশ, তা বানিয়ে দিচ্ছে লারসেন অ্যান্ড টুবরো সংস্থা। গুজরাটে তৈরি হচ্ছে কুতুব মিনারের মতো উঁচু একটি যন্ত্র। আইটিইআর’এর প্রধান বিজ্ঞানী
টিম লিউস বলছেন, ‘ভারত আমাদের খুব মূল্যবান সঙ্গী। তারা ক্রায়োস্ট্যাটটি তৈরি করে দিচ্ছে। বিজ্ঞানের জগতে এটাই সবচেয়ে বড় শীতল যন্ত্র হতে চলেছে।’
[আরও পড়ুন: পরিবেশ প্লাস্টিকমুক্ত করতে স্কুল পড়ুয়াদের উদ্যোগ, ঘরে ঘরে সচেতনতা প্রচার]
আইটিইআর সূত্রে খবর, ২০২৫ সাল নাগাদ শুরু হতে পারে এই গবেষণা। এর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী যন্ত্র ‘ডেমো’ও তৈরি করবে ভারত।এনিয়ে মু্ম্বইয়ের ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডক্টর অনিল কাকোদকর জানিয়েছেন, ‘এমন একটি কাজের দায়িত্ব পেয়ে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। ভারতের মাটিতে এই যন্ত্র তৈরির জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা
এতে অনেক দূর লাফ দেবেন। যেটা আমাদের কাছে স্বপ্ন।’ প্রসঙ্গত, নাসায় সূর্য সংক্রান্ত গবেষণার কাজে রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের তরুণ বিজ্ঞানী শৌভিক বসু। আলিপুরদুয়ারের নিউটাউন দুর্গাবাড়ির বাসিন্দা। তিনিও কাজ করছেন সূর্যের শক্তি নিয়েই। ফলে সৌর গবেষণায় বাঙালি যে ভরসাযোগ্য, তা প্রমাণিত। এবার সৌরশক্তির গবেষণায় অন্যদের পিছনে ফেলে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা কতটা এগিয়ে যান, তারই অপেক্ষায় গোটা দেশ।
The post শক্তি বুঝতে পৃথিবীতেই তৈরি সূর্যের সংস্করণ, মহা গবেষণায় মূল অবদান ভারতেরই appeared first on Sangbad Pratidin.