অর্ণব আইচ: কি-প্যাডের উপর জায়গাটি একটু অন্যরকম লাগছে কেন? কেমন যেন সন্দেহ হয়েছিল এটিএমের নিরাপত্তারক্ষী নারায়ণ দে-র। জায়গাটি একটু নাড়াচাড়া করতেই কি-প্যাডের উপরের অংশটিই যেন খুলে চলে এল ওই প্রৌঢ় নিরাপত্তারক্ষীর হাতে। দেখে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। সেটি যে এটিএমের কোনও অংশই নয়। একটি নকল প্যাড মাত্র। তলার দিকে লাগানো রয়েছে ছোট ক্যামেরা। সঙ্গে একটি ডিভাইস। কয়েকটি তার।
এটিএমের বাইরে লাইন। টাকা তোলার নাম করে ভিতরে ঢুকে মিনিটখানেকের মধ্যে এটিএমে ‘স্কিমার’ লাগিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় জালিয়াত। এর পর ওই স্কিমার লাগানো এটিএম থেকে একে একে টাকা তুলেছিলেন ১৯ জন। আর তাঁদের লেনদেনের যাবতীয় গোপন তথ্য উঠে এসেছিল ‘স্কিমার’ যন্ত্রটির ১৬ জিবি মেমোরি কার্ডে। একই দিনে আরও বহু মানুষ টাকা তোলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওই এটিএমে। কিন্তু ওই নিরাপত্তারক্ষীর তৎপরতাই শেষ পর্যন্ত জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষা করল বহু শহরবাসীকে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র-ছাত্রী। শুক্রবার লালবাজারে বসে এটিএম জালিয়াতি নিয়ে গঠন করা ‘সিট’-এর আধিকারিকদের সামনে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন নিরাপত্তারক্ষী নারায়ণবাবু। দিল্লি থেকে আটক হওয়া রোমানিয়ার দুই বাসিন্দার ছবিও তাঁকে দেখানো হয়। কারণ, জালিয়াতের প্রথম ফুটেজটি আড়াই মাস আগে মিলেছিল ওই এটিএমের সিসিটিভি থেকেই।
[নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে চেনাল লা মার্টস বয়েজের পড়ুয়ারা]
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজে ভরতির সময় এই ঘটনার সূত্রপাত। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের এলগিন রোডের একটি নামী কলেজে ভরতির জন্য লাইন পড়েছে। একই সঙ্গে লাইন পড়েছে কলেজের কাছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনেও। লাইনে যাঁরা দাঁড়িয়ে তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্র-ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবক। নদিয়ার কল্যাণী থেকে সকাল পৌনে আটটার মধ্যেই ডিউটি করতে এটিএমে আসেন নিরাপত্তারক্ষী নারায়ণ দে। তিনি পোশাক পালটে সকাল আটটা নাগাদ বাথরুমে যান। সিসিটিভির ফুটেজ জানাচ্ছে, সকাল ৮টা ২ মিনিটে এটিএমে ঢোকে জালিয়াত। টাকা তোলার নাম করে এক মিনিটের মধ্যে সোয়াইপ করার জায়গায় সবুজ রঙের স্কিমার লাগায়। কি-প্যাডের উপর লাগায় ক্যামেরার প্যাড। লম্বা চওড়া চেহারার ওই জালিয়াত মেশিনের সামনের দিকটা ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিল। তার মুখে ছিল কালো মাস্ক। ফলে এটিএমের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো কেউ বুঝতেও পারেননি যে, সে কী করছে। সে বেরিয়ে যাওয়ার পর ১৯ জন ওই স্কিমার যন্ত্রে তাঁদের এটিএম কার্ড সোয়াইপ করে টাকা তোলেন। অথচ কেউই বুঝতে পারেননি যে, তাঁদের তথ্য রেকর্ড হয়ে গিয়েছে স্কিমারে। গোপন ক্যামেরায় উঠেছে পিন নম্বরের ছবি। ২০তম ব্যক্তিটি টাকা তোলার আগেই এটিএম পরীক্ষা করতে যান নারায়ণবাবু।
[OMG! মাত্র ৪৫ সেকেন্ডেই এটিএম থেকে গ্রাহকদের তথ্য চুরি!]
তিনি গোয়েন্দাদের জানান, কি-প্যাডের উপর লাগানো ক্যামেরার প্যাডটি টেনে বের করার পর তিনি অবাক হয়ে যান। ব্যাঙ্কের এক আধিকারিককে ফোন করে জানাতেই তিনি নিরাপত্তারক্ষীকে এটিএম বন্ধ করে দিতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটিএমে পৌঁছন ভবানীপুর থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। কিন্তু তাঁরাও প্রথমে স্কিমার খুঁজে পাননি। এক ইঞ্জিনিয়ার এসে এটিএম পরীক্ষা করতে গিয়ে সোয়াইপ মেশিনের উপর লাগানো স্কিমারটি উদ্ধার করে পুলিশের হাতে দেন। অবশ্য তখনও বোঝা যায়নি যে শহরজুড়ে অন্য এটিএমেও হানা দিয়েছে জালিয়াতরা। পুলিশের ধারণা, পাঁচ মেগাপিক্সেলের ওই গোপন ক্যামেরা কোনও পুরনো মোবাইল থেকে খুলে নেওয়া। দুই জালিয়াতকে ধরা হলে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে শনাক্ত করানো হতে পারে বলে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ।