সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিস্ফোরিত চোখে এখনও ভাসছে আতঙ্কের ছায়া। দু’টি আঙুলের মাঝে ধরা দলা পাকানো শার্টের অংশ। আর্ত স্বরে একটাই বক্তব্য, “আমাদের বাড়ি ঘর সব গিয়েছে। দয়া করে কমরেডদের কথা জানতে চাইবেন না। আমরা আর বিপদে পড়তে চাই না।” ১৬ বছরের ঝাড়খণ্ডের কিশোর লাচ্চুর এই বক্তব্যে লুকিয়ে আছে মাও সন্ত্রাসের এক ঘৃণ্য অধ্যায়।
[ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু মডেল সোনিকার, আহত অভিনেতা বিক্রম]
মাত্র ১০ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেনির ছাত্র লাচ্চুর জীবনে নেমে এসেছিল এক ভয়ঙ্কর ছায়া। মাও সন্ত্রাসে জর্জরিত পশ্চিম সিংভূমে বাবা, মা ও তিন ভাই-বোনের সঙ্গে থাকত লাচ্চু। সেখান থেকে ২০১৫ সালে তাকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। নিয়ে যাওয়া হয় সারান্ডা জঙ্গলের গভীরে এক কাম্পে। সেখানে তাকে সেখান হয় ‘পুঁজিবাদীদের’ অত্যাচারে নিপীড়িত শ্রমিকদের উদ্ধারে হাতে তুলে নিতে হবে বন্দুক। নির্মম ভাবে হত্যা করতে হবে শ্রেণিশত্রুদের। তবেই আসবে মুক্তি। সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলির কথা মনে পড়লে আজও ২০০ কিলোমিটার দূর রাঁচিতে বসে কেঁপে উঠে ওই কিশোর।
[অবশেষে পুুরভোটে হারের দায় স্বীকার কেজরির]
সম্প্রতি, এক রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে ভয়ানক এক তথ্য। মাও সন্ত্রাসে জর্জরিত ঝাড়খণ্ডে এবার নাবালকদের অপহরণ করে দলে ভর্তি করছে মাওবাদীরা। বিশেষত, লোহারদাগা, গুমলা, লাতেহার ও ছত্তিসগড় সীমান্তের কাছে সিমডেগাতে গত কয়েকবছরে প্রায় এক হাজারেরও বেশি নাবালকদের অপহরণ করে নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল করেছে মাওবাদীরা। রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন ওই বালক ও কিশোরদের বোমা বানানো, গুলি ছোড়া ও লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে লড়তে পাঠানো হত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঝাড়খন্ডে প্রায় ১০টি মাওবাদী দল সক্রিয় রয়েছে। রয়েছে প্রায় ৪০০ সদস্য। প্রায় ২০০ শিশু সৈনিক রয়েছে ওই দলগুলিতে। গত কয়েকবছরে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর অভিযানে মারা পড়েছে অনেক মাও নেতা ও যোদ্ধা। ২০১৬ সালে প্রায় ৪০ জন মাওবাদীকে খতম করে পুলিশ। তারপর থেকেই শক্তি বাড়াতে শিশু সৈনিক নিয়োগে তৎপর হয়েছে তারা। ঝাড়খণ্ড ছাড়াও ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও ওড়িশায় চরম আকার নিয়েছে মাও সন্ত্রাস।
[লন্ডনে ভয়াবহ জঙ্গি হানার ছক বানচাল, গ্রেপ্তার ৬]
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই সুকমায় অতর্কিতেই সেনার উপর হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা৷ সাম্প্রতিক অতীতে আধাসেনাদের উপর এতবড় হামলা আর হয়নি৷ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৫ সিআরপিএফ জওয়ান৷ শহিদের আত্মবলিদান বৃথা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও৷ ঠান্ডা মাথার খুন বলে এই ঘটনাকে অভিহিত করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ আগামী মে মাসে মাও অধ্যুষিত রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন তিনি৷ মাও দমনের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতেই এই বৈঠক৷
The post শিশু সৈনিক তৈরি করে হামলার ছক মাওবাদীদের appeared first on Sangbad Pratidin.