অভিরূপ দাস: মরণোত্তর দেহদান করে গিয়েছিলেন তিনি। চেয়েছিলেন নশ্বর দেহ আগুনে ভস্মীভূত না হয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে লাগুক। কিন্তু প্রয়াত সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর শেষ ইচ্ছে পূরণ হল না। গণদর্পণ সংস্থাকে দেহ দান করলেও তারা সেই দেহ নিতে পারেননি। কারণ ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী করোনায় মারা গিয়েছেন প্রবীণ সিপিএম নেতা। স্নাতকোত্তর চিকিৎসা বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে মৃতদেহের প্রয়োজন। মৃত্যুর পরে নিজের নশ্বর দেহকে সেই কাজেই লাগাতে চেয়েছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। বেঁচে থাকতে শ্রমিক ভবনে একাধিকবার ডাকতেন গণদর্পণের সদস্যদের। বলতেন, “কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। মারা গেলে দেহ নিয়ে নিবি।” সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আফশোস করছেন গণদর্পণের সদস্যরা।
বেসরকারি হাসপাতালে সূত্রে খবর, মারা যাওয়ার আগে তার পরপর দুবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। গণদর্পনের সদস্যদের দাবি, করোনায় মৃতদেহগুলির অটোপসি চালু করা উচিত। মৃতদেহের অটোপসি করা হলে জানা যেত ঠিক কোন কারণে মারা গিয়েছেন তিনি। গণদর্পণের শ্যামল চট্ট্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওনার কো-মরবিডিটি ছিল। সিওপিডির কারণে ফুসফুস বিকল হয়েছিল। যদি দেহের ময়নাতদন্ত করা হত তাহলে হয়তো দেখা যেত আদৌ করোনার জন্যে মারা যাননি শ্যামল চক্রবর্তী। সেক্ষেত্রে তাঁর দেহটা দান করা যেত। বাবার দেহ দান করা যায়নি বলে আক্ষেপ করেছেন শ্যামলবাবুর মেয়ে উষসী চক্রবর্তীও। প্রবীণ এই নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রীর ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল৷ এর ফলে আগেও তিনি বহুবার সমস্যায় ভুগেছেন৷ তার মৃত্যুর যে করোনার কারণেই এমনটা এখনই বলা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন গণদর্পনের সদস্যরা।
[আরও পড়ুন: ছাত্র আন্দোলন থেকে দাপুটে শ্রমিক নেতা, ঈর্ষণীয় রাজনৈতিক জীবন ছিল শ্যামলের]
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই করোনায় মৃতদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে। সে কারণে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে পাঁচ সদস্যের একটি টিমও তৈরি হয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এখনও তার অনুমোদন দেয়নি। আইসিএমআর জানিয়েছে, এখনই এই বিষয়ে ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়। তার জন্য লোকবলের অভাবও একটা কারণ। রাজ্যে মরণোত্তর দেহদান নিয়ে গত ত্রিশ বছর ধরে কাজ করছে গণদর্পন। এই লকডাউনের মধ্যেও পাঁচটি স্বাভাবিক মৃতদেহ তারা সংগ্রহ করেছে। তবে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেনে নিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাদের শরীরে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে তা জানা সম্ভব হচ্ছে না। মৃত ব্যক্তিদের অটোপসি (ময়নাতদন্ত) ছাড়া এটি জানা সম্ভবও নয়। কিন্তু রাজ্যে করোনা আক্রান্ত মৃতদের অটোপসি করার বিষয়টি আইসিএমআর-এর অনুমোদন না পেয়েই আটকে।
[আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী]
প্রসঙ্গত, প্রথম করোনায় মৃতদের ময়নাতদন্তে পথ দেখিয়েছিল ইটালি। সেখানেই প্রথম পঞ্চাশ করোনায় মৃতের শরীরে ময়নাতদন্ত করে দেখা হয়। আদৌ কীভাবে শরীরের ক্ষতি করছে ভাইরাস। ১৯৯০ সালের ১৮ জানুয়ারি সুকুমার হোম চৌধুরির মৃতদেহ প্রথম আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে দান করা হয়। সেই ছিল প্রথম মরণোত্তর দেহদান। এরপর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দেহও দান করা হয়েছিল। করোনা আবহে তা থমকে গেল প্রাক্তন মন্ত্রীর বেলায়।
The post পূরণ হল না শ্যামলের শেষ ইচ্ছা, প্রয়াত শ্রমিক নেতার দেহ চলে গেল সরকারি হাতে appeared first on Sangbad Pratidin.