কৃষ্ণকুমার দাস: শুধুমাত্র পরিবার নয়, এবার ‘সিঙ্গল পুরুষ’কেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে এজন্য স্থানীয় কাউন্সিলর বা বিধায়কের কাছ থেকে একাকী, পরিবারহীন থাকার ‘বৈধতাপত্র’ সংগ্রহ করে ফর্মের সঙ্গে জমা দিতে হবে আবেদনকারীকে। অবশ্য ফর্ম জমা পড়ার পর প্রয়োজনে সরেজমিনে গিয়ে বিভাগীয় আধিকারিকরা খতিয়ে দেখে তবেই একাকী থাকা পুরুষকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড অনুমোদন করবেন।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, ‘‘প্রথম যখন স্বাস্থ্যসাথী চালু হয় তখন পরিবারের মহিলাদের নামেই পরিবারকে এই চিকিৎসা বিমা দেওয়া হচ্ছিল। এরপর প্রথমে সিঙ্গল মহিলা এবং পরে একাকী পুরুষদেরও স্বাস্থ্যসাথী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে সিঙ্গল তার প্রমাণ হিসাবে জনপ্রতিনিধির থেকে একটা সার্টিফিকেট ফর্মের সঙ্গে পুরুষদেরও জমা দিতে হবে।’’ স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, টানা দু’বছর ধরে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যেমন বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন তেমনই আবেদন করেও শুধুমাত্র ‘সিঙ্গল’ থাকায় অনেকে এই চিকিৎসা বিমার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকায় নাম! চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ‘আত্মঘাতী’ নন্দীগ্রামের শিক্ষিকা]
স্বাস্থ্যদপ্তরের পোর্টালের তথ্য থেকে স্পষ্ট, রাজ্যে এই ‘সিঙ্গল’ আবেদনকারীর সংখ্যাটি প্রায় ১০ লক্ষ। আবার এই আবেদনকারীর একটা অংশ একাকী থাকা পুরুষ। এঁদের কারও স্ত্রী আগেই মারা গিয়েছেন, সন্তানাদি নেই। আবার অনেক পুরুষের সন্তানরা বিদেশে থাকেন, স্ত্রীর সঙ্গে বহুদিন হল বিচ্ছেদ হয়েছে। পরিবারহীনদের নিয়ে একই ধরনের সমস্যা বহু মহিলার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ব্লক বা ওয়ার্ডে দেখা গিয়েছে। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে স্বাস্থ্যসাথীর ফর্ম নিয়ে আসা বেশ কিছু ‘সিঙ্গল’ আবেদনকারীর ক্ষেত্রে এমন সমস্যার খবর পৌঁছয় স্বাস্থ্যভবনে।
বিষয়টি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে জানতেই সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সিঙ্গলদেরও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়ার সবুজ সংকেত দিয়েছেন। আর কলকাতা পুরসভা ওয়ার্ডভিত্তিক যে সমস্ত ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির চলছে সেখানেও সিঙ্গল মহিলাদের পাশাপাশি নিঃসঙ্গ পুরুষদেরও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। পুরসভার সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে ‘পরিবারহীন’ সার্টিফিকেট নিয়ে তবেই স্বাস্থ্যসাথীর ফর্ম জমা দিতে বলা হয়েছে আবেদনকারীদের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর যখন রাজ্যের প্রত্যেক পরিবার পিছু বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার ‘ক্যাশলেস’ চিকিৎসা বিমা চালু করেন তখন বাড়ির প্রবীণ মহিলাদের নামেই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রথমে পরিবারের মহিলাদের নামে চালু হলেও দেখা যায়, প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ নিজেকে ‘সিঙ্গল’ দেখিয়ে আবেদন করেছেন। ঘোষণার পিছনে যে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে তা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কারণ, একই পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় ‘৫ লক্ষ টাকার ক্যাশলেস’-এর বাড়তি সুবিধা পেতে নিজেকে সিঙ্গল দেখিয়ে একাধিক কার্ড তৈরি করেন বলে অভিযোগ। বস্তুত এই কারণে ‘পরিবারহীন’-এর বাস্তব তথ্য সরেজমিনে খতিয়ে দেখেই স্বাস্থ্যসাথী দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর।