সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একমাস সবে পেরিয়েছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে বামপন্থার সর্বভারতীয় স্তরের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণ (Sitaram Yechury Death) সংবাদ এসেছে। আরও ফিকে হল কাস্তে-হাতুড়ি-তারার ধার! গত ১৯ আগস্ট থেকে দিল্লির এইমসে ভর্তি ছিলেন আদতে তামিলনাড়ুর বাসিন্দা, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত হার মানতে হল প্রবীণ কমরেডকে। তাঁর এই চলে যাওয়া বাম রাজনীতিতে এক বিশাল শূন্যতা, তা বলা বাহুল্য। দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এক ব্যক্তিকেও হারাল জাতীয় রাজনীতি। ইয়েচুরির গুণাবলী নিয়ে বলতে গেলে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। তার মধ্যে কিছু কিছু তো স্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
ছোটবেলা থেকে মেধাবী ইয়েচুরি কখনও প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। সিবিএসই বোর্ডের এইচএস পরীক্ষাতেও প্রথম হয়েছিলেন। হায়দরাবাদে স্কুল শিক্ষা শেষের পর চলে যান দিল্লিতে। অর্থনীতির মতো বিষয় নিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ইয়েচুরি। বামপন্থী রাজনীতির দিকে ঝোঁক ছিল বরাবর। কেন্দ্রে কংগ্রেসি ক্ষমতার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে সত্তর দশকের উত্তাল সময়ে যোগ দেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনে। এসএফআই-এর সদস্য হন। সতীর্থ প্রকাশ কারাটের সঙ্গে মিলে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির ধরন বদলে দিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: দিল্লিতে গিয়ে ধনকড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ, তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়লেন জহর সরকার]
এসএফআই সদস্য থেকে JNU ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট, সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তবু, ইয়েচুরির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা নিঃসন্দেহে জরুরি অবস্থায় তাঁর কীর্তি। ইন্দিরা গান্ধীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে 'এমারজেন্সি'র বিরোধিতায় বিবৃতি পাঠ, তাঁর মুখের উপর দাঁড়িয়ে তর্কের জবাব। এসবের মধ্যেই বোধহয় নিহিত ছিল চেন্নাইয়ের তরুণের উজ্জ্বল রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে ছাত্রাবস্থায় গ্রেপ্তার হন সীতারাম ইয়েচুরি। ছিলেন আন্ডারগ্রাউন্ডে। সে বছরই তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হন। এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজনৈতিক জীবনেও একের পর এক ছাপ রেখে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: দিল্লিতে গিয়ে ধনকড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ, তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়লেন জহর সরকার]
২০০৬ থেকে ২০১৭ - দুবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। তারই মধ্যে ২০১৫ সাল থেকে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তাই ২০১৭ সালে রাজ্যসভার মেয়াদ শেষের পরও তাঁকে ফের সাংসদ করার প্রস্তাব খারিজ করে দেয় সিপিএম। উল্লেখ্য, যে ইন্দিরা গান্ধীর বিরোধিতা করে জেলে যেতে হয়েছিল 'ছাত্র' ইয়েচুরিকে, সেই ইন্দিরার পৌত্র রাহুল গান্ধীরই রাজনৈতিক 'পরামর্শদাতা' হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে রাহুল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সোশাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেছেন। সাংসদ হিসেবে প্রাক্তন সতীর্থের প্রয়াণে শোকাহত তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। রাজ্যসভায় ইয়েচুরির ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি।
রাজ্যসভায় তুখড় বক্তা সীতারাম ইয়েচুরি।
বামেরা বলছেন, সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণ দলের আরেক প্রবাদপ্রতিম নেতা 'হরকিষেণ সিং সুরজিৎ' ঘরানার রাজনীতির ইতি টানল। ইয়েচুরির প্রয়াণে রাজ্য সিপিএম সম্পাদক মহঃ সেলিমের প্রতিক্রিয়া, গোটা রাজ্যে দলের পতাকা অর্ধনমিত থাকবে তাঁর শেষযাত্রা পর্যন্ত। সেই সময় পর্যন্ত সিপিএমের সমস্ত সভা, কর্মসূচি স্থগিত করা হল। তবে চলমান আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সুবিচার মিললেই তাঁর প্রতি আসল শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে মন্তব্য সেলিমের।