অভিরূপ দাস: কপালের ফেরে শরীরে বাসা বেঁধেছিল দুরারোগ্য ব্যাধী। প্রৌঢ়ত্বে তা-ই এনে দিল মেডেল। অসুখকে বশে রাখার আজব সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল এশিয়ার অন্যতম হেলথ কেয়ার গ্রুপ ডা. মোহন ডায়বেটিস স্পেশালিটিস সেন্টার। দেশের মধ্যে প্রথম এমন আজব সংবর্ধনা। যা অনুষ্ঠিত হল অনলাইনে। পুরস্কার পেলেন ছ’জন। স্কুলে পড়াকালীন এই ছ’জনের শরীরে বাসা বেঁধেছিল টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস (Diabetes)। তারপর কেটে গিয়েছে ৭০ বছর। মধুমেহকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এখনও দিব্যি চনমনে তাঁরা। সুগার হলেই যাঁরা ভয়ে শিটিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের কাছেই উদাহারণ এই ষষ্ঠ রত্ন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং এর উপস্থিতিতে ছ’জনকে সংবর্ধিত করেন ডা. ইন্টারন্যাশনাল ডায়বিটিস ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন ডা. শশাঙ্ক যোশী, ছিলেন রিসার্চ ফেডারেশন ফর দ্য স্টাডি অফ ডায়বেটিস ইন ইন্ডিয়ার সভাপতি ডা. বংশী সাবু, পুডুচেরি ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের এন্ডক্রিনোলজির চিকিৎসক ডা. অশোক কুমার দাস। কি এই টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস? বিজ্ঞানীরা বলছেন, টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের যেসব কোষ ইনসুলিন তৈরি করে সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ইনসুলিন হল সেই হরমোন যা প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ঘন ঘন প্রস্রাব, দিনভর ক্লান্তি কিম্বা অস্পষ্ট দৃষ্টি এসবই টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসের উপসর্গ। এই উপসর্গই ছিল মেডেলজয়ী কে কৃষ্ণস্বামীর।
[আরও পড়ুন: চাপের মুখে সুর নরম সোনিয়ার, Congress-এর নতুন সংসদীয় কমিটিতে ‘বিদ্রোহী’রাও]
৮৬ বছরের কৃষ্ণস্বামী চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাঁর শরীরে টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস ধরা পরে। টানা ৭০ বছর ধরে মারণ অসুখ তাঁর সঙ্গী। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন মুম্বাইয়ের মীনা ফার্নান্ডেজ। ৭২ বছরের মীনাদেবী বিগত ৬২ বছর ধরে টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসে আক্রান্ত। নিজেকে তিনি যেভাবে তরতাজা রেখেছেন তা দেখেই তাঁকে মুম্বইয়ের জুভেনাইল ডায়বেটিস ফাউন্ডেশনের ম্যাসকট করা হয়েছে। তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ী এসআরভি প্রসন্ন কোয়েম্বাটুরের বাসিন্দা। মাত্র তিন বছর বয়সে টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন তিনি। আজ তাঁর বয়স ৬৪। দীর্ঘ ৬১ বছর যোগব্যায়াম এবং নির্দিষ্ট ওষুধের মাধ্যমে তিনি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন মধুমেহকে। পুরস্কারের তালিকায় অন্য তিনজন হলেন উষা ধীমান (৬৮), রাজীব কাইকার (৬৪) এবং এম রাকেশ (৬৯)। ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এরা টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু দেখলে বোঝার উপায় নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এঁদের দেখেই মনে বল ভরসা পাবেন ডায়বেটিস আক্রান্তরা। বুঝতে পারবেন অসুখ মানেই সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়।