অভিরূপ দাস: মাইলের পর মাইল ছুটছেন নেতা-নেত্রীরা। তাঁদের পায়ের তলায় চাপা পড়ছে ধুলো-বালি, ভাইরাস। সেই জুতো পরেই তাঁরা ঢুকে পরছেন ক্লাবে, টালির ঘরে। সবার অজান্তে সমর্থকদের চৌকাঠেও পৌঁছে যাচ্ছে ভাইরাস। করোনা সংক্রমণ (Corona Pandemic) ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম কিন্তু জুতোও। সংক্রমণ রোখার উপায় একটাই। জল—সাবানে ধুয়ে ফেলতে হবে জুতো। ফি দিন চামড়ার জুতো ধোয়া অসম্ভব। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ‘হাওয়াই চটি’-কেই আদর্শ বলছেন চিকিৎসকরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ কিম্বা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বহু আগেই গবেষণা করে জানিয়েছিল, কাঠের বোর্ডে ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে ভাইরাস। জুতোর তলায় তার আয়ু টানা পাঁচদিন! জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, করোনা ফের বাড়ছে রাজ্যে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কোভিড বিধি মেনে যদি প্রচার চালানো হয়, তার জন্য আগেই চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। প্রতিটি দলের সদর দপ্তরেও পৌঁছেছে চিঠি। কিন্তু তার পরেও ভয় ধরাচ্ছে নেতা-নেত্রীদের জুতোর শুকতলা। চামড়া কিম্বা রবারের তৈরি জুতো ভাইরাসের অন্যতম কেরিয়ার। জুতোর মধ্যে লেগে থাকা ভাইরাস ঘরের তাপমাত্রায় দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। এই তথ্যেই আশঙ্কিত চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: মাঝরাতে নৈহাটিতে শুটআউট, আশঙ্কাজনক বিজেপি কর্মী, আনন্দপুরে আক্রান্ত মহিলা সদস্যরা]
প্রচার চলাকালীন জুতো খোলার সময় পান না নেতা, প্রার্থীরা। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে জুতো পরেই তাঁরা ঢুকে পরছেন দোকানে, বাড়িতে। জনস্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, প্রচার চলাকালীন, ঘিঞ্জি জায়গায় যেতে হয় নেতা, মন্ত্রীদের। হাসপাতাল চত্বর, বাজার এলাকাও পেরিয়ে আসেন। অজান্তেই মারিয়ে ফেলতে পারেন করোনা রোগীর কফ, থুতু। জুতোর তলায় লেগে থাকা সেই ভাইরাস খালি চোখে নজরে না পরলেও শুকতলার মাধ্যমেই ঢুকে পড়ছে মানুষের বাড়িতে। শুধু তাই নয় এমন ভাইরাস লেগে থাকা জুতোর মাধ্যমে নেতা-নেত্রীরাও আক্রান্ত হতে পারেন। জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হলেও জুতো ধোঁয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই জুতোর শুকতলা থেকে সবচেয়ে বড় সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আমজনতার প্রতি চিকিৎসকদের পরামর্শ, যত বড় সমর্থকই হোন না কেন, জুতো পরে প্রার্থীরা যেন বাড়ির মধ্যে প্রবেশ না করেন। পরামর্শ রয়েছে নেতাদের জন্যেও। ডা. দলুই জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক নেতাদের বলব সারাদিন যে জুতো পরে প্রচার করেছেন, তাঁকে খুলে আসতে হবে বাড়ির সদর দরজার বাইরে। সবচেয়ে ভাল হয় প্রচার শেষে ওই জুতো যদি সাবান জল দিয়ে ধোয়া যায়।” কিন্তু চামড়ার জুতো সাবান জল দিয়ে ধোঁয়া সম্ভব কি? এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আদর্শ করার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক। তাঁর কথায়, “ উনি সর্বক্ষণ হাওয়াই চটি পরেন। এটা এই করোনা আবহে অত্যন্ত স্বাস্থ্য সম্মত। হাওয়াই চটি যেকোনও সময় সাবান জল দিয়ে ধোওয়া সম্ভব। তাতে যেমন সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে, তেমনই করোনা বিধিও মেনে চলা সম্ভব।”