সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বঙ্গে ভোট তো শুধু ভোট নয়, রাজনীতির মহাযুদ্ধ। যুদ্ধে সৈনিকদের উদ্বুদ্ধ করতে শত্রু শিবিরের উদ্দেশে হুঙ্কার, হুঁশিয়ারি, কটাক্ষ থাকবে না তা আবার হয় নাকী! রাজধানী এক্সপ্রেসের দৌড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে সংলাপের উত্তাপ। একদিকে, বঙ্গে পা রেখে ধর্মের বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে, তাঁকে 'কুচুটে' বলে কটাক্ষ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপের উদ্দেশে আবার শোনা যাচ্ছে 'হাউ ইজ দ্য জোশ'। সব মিলিয়ে বাংলার বাতাস ভরে উঠেছে চোখা চোখা শব্দবন্ধে।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বাংলায় ভোট মানেই সংবাদ মাধ্যমের নজর থাকত বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল, কামারহাটির মদন মিত্রের দিকে। তবে অনুব্রত এখন জেলে। রাজনীতিতে থাকলেও কিছুটা ব্যাকফুটে মদন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের জায়গা দখল করে ভোটের বাজারে দাপট দেখাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ, মিঠুন চক্রবর্তীরা। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েই ভোটের প্রচারে স্বমহিমায় মাঠে নেমে পড়েছেন দিলীপ। কখনও হুমকি দিচ্ছেন পুলিশের প্যান্ট খোলার তো কখনও থানা জ্যাম করার। কুকথায় উদ্বুদ্ধ জনতাও ভোটের বাজারে তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নয়া স্লোগান, 'হাউ ইজ দ্য জোশ! দিলীপ ঘোষ, দিলীপ ঘোষ'।
[আরও পডুন: ‘খলিস্তান জিন্দাবাদ’, মেট্রো স্টেশনে লেখা স্লোগান ঘিরে শোরগোল রাজধানীতে]
এদিকে ২১-এর ঝাঁঝ বজায় রাখলেও ২৪-এর ভোটে আর জাত গোখরোর ‘বিষ’ ছোবল মারছেন না মিঠুন চক্রবর্তী। শ্মশানের পরিবর্তে এবার প্রতিপক্ষকে লাল পিঁপড়ের কামড় খাওয়ানোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন 'মিঠুনদা'। অতীতের মন্তব্যে মামলা খেয়ে এবারের ভোট প্রচারে তাঁর ডায়লগ, "চিমটি কাটব এখানে। আর লাল পিঁপড়ের মতো জ্বলবে এখানে-ওখানে-সেখানে।" হুমকি, হুঁশিয়ারির মাঝে আরও একজন রয়েছেন তিনি অবশ্য শুরু থেকে ট্রোলড হয়েই রাজনীতির শিরোনামে। ইনি হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও উন্নয়নে ধোয়ার ছবি দেখিয়ে তো কখনও শুধু হেসেই সোশাল মিডিয়ায় শিরোনামে রচনা।
[আরও পডুন: ইনশাআল্লাহ… একদিন হিজাব পরা মহিলা দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন: আসাদউদ্দিন ওয়েইসি]
প্রচারে ডায়লগ ও স্লোগানে থেকে কটাক্ষ কোনও কিছুতেই পিছিয়ে নেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিজেপিকে হারাতে একের পর এক জনসভা করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রচারে বিজেপিকে আক্রমণের পাশাপাশি হিন্দি শায়েরি শুনিয়ে মঞ্চ মাতাতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। স্বাধীনতা সংগ্রামের মন্ত্র ধার করে কখনও বলছেন, 'সারফরোসি কি তামান্না আজ হামারে দিল মে হ্যায়। দেখনা হে জোর কিতনা বাজুয়ে কাতিল মে হ্যায়।' তো কখনও আবার বলছেন, 'আগার রাহা গুলশান তো জোড়া ফুল খিলেঙ্গে, অর রাহা জিন্দেগি তো বার বার মিলেঙ্গে।' শুধু তাই নয়, ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘হিংসুটে, কুচুটে’ বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী।
তবে বাংলায় ভোটের প্রচারে এসে সেভাবে কুকথার ধার মাড়াননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বরং অন্য আঙ্গিকে ধর্মের বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছেন তিনি। কখনও তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে জয় শ্রী রাম স্লোগান। তো কখনও সরাসরি মুসলিম বিরোধী মন্তব্য করে বলছেন, 'হিন্দুদের সম্পদ বিরোধীরা তাঁদের হাতে তুলে দেবে যাঁদের বেশি সন্তান রয়েছে। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ যাবে না।' ধর্মের নামে ভাগাভাগির পাশাপাশি এবারের ভোটে অন্যতম ইস্যু সন্দেশখালিও। অমিত শাহ থেকে যোগী আদিত্যনাথ এমন কী সুকান্ত মজুমদারও ঘোষণা করে দিয়েছেন সন্দেশখালি কাণ্ডে যারা যুক্ত তৃণমূলের সেই গুন্ডাদের উলটো করে ঝোলাবেন। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া আবার গানে গানে আক্রমণ করেছেন মোদিকে। 'মোদিজি, তুম তো ধোকেবাজ হো...'। সব মিলিয়ে স্লোগান, গান, কটাক্ষ, ডায়লগ থেকে কুকথা- লোকসভার বাংলায় 'বিতর্কিত' রাজনীতির বাগযুদ্ধ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে বাংলার জনতা।