দেবাশিস সেন, বার্বাডোজ: কে জানে সতেরো বছর আগের সেই অভিশপ্ত বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কি না রাহুল শরদ দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid)?
২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে সেবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ভারত। সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছিল ক্যাপ্টেন রাহুল দ্রাবিড়কে। এবার সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই বিশ্বজয়ের ঠিক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি। তফাত বলতে দ্রাবিড় আর ভারতীয় অধিনায়ক নন। তিনি এখন কোচ।
আরও অদ্ভুত, এমন একটা সময়ে তিনি বিশ্বকাপ জয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যার পর তিনি সরকারিভাবে কোচের দায়িত্ব ছাড়বেন। রোহিত শর্মারা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন দ্রাবিড়কে। যাতে তিনি থেকে যান। দ্রাবিড় রাজি হননি। ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে ব্রডকাস্টার চ্যানেলে প্রোমো চলছে অনবরত-‘ডু ইট ফর দ্রাবিড়’। ভারতীয় ক্রিকেটমহল তাই বলছে। হয়তো রোহিতরাও সেটাই চাইছেন। শনিবার ভারত জিততে পারলে দুটো জিনিস হবে। এক, রোহিতরা এগারো বছর আইসিসি ট্রফি জিততে না পারার খরা কাটাতে পারবেন। দুই, দ্রাবিড়ের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে।
[আরও পড়ুন: লিগ-শিল্ড জয়ী তিন তারকার বিদায়, নতুন মরশুমের আগে বড় পদক্ষেপ মোহনবাগানের]
কিন্তু এমন একটা ফাইনালের আগেও ভারতীয় কোচ অদ্ভুতরকম নির্লিপ্ত। পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তাঁর জন্য ট্রফি জেতার দরকার নেই। টিমের ট্রফি জেতা দরকার। ফাইনালের আগে দ্রাবিড় বলছিলেন, ‘‘এটা খুব ভালো ব্যাপার যে আমরা ধারাবাহিকভাবে দারুণ ক্রিকেট খেলছি। তিনটে ফরম্যাটেই আমরা ফাইনালে খেলেছি। সব কৃতিত্ব ক্রিকেটারদের দিতে হবে। আশা করি ভাগ্য এবার আমাদের সঙ্গে থাকবে।’’
রোহিত নিজেও একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর প্রায় কেঁদে ফেলেছিলেন। দেশের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে না পারার যন্ত্রণাটা এখনও বয়ে বেড়ান ক্যাপ্টেন রোহিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যার শাপমুক্তি ঘটাতে চাইছেন তিনি।
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই টিম সেমিফাইনাল খেলে বার্বাডোজ এসেছে। এদিন আর কেউ মাঠমুখো হননি। শুধু অধিনায়ক এসেছিলেন। সঙ্গে কোচ দ্রাবিড় আর পুরো সাপোর্ট স্টাফ। স্টেডিয়াম ঢুকেই রোহিতরা গেলেন পিচ দেখতে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে কিউরেটরের সঙ্গে কথা বলেন রোহিত-দ্রাবিড়। উইকেট দেখে যা মনে হচ্ছে, তাতে একেবারে পাটা ব্যাটিং পিচ হতে চলেছে শনিবার। পরের দিকে বল হয়তো কিছুটা টার্ন করবে। আইসিসিও ফাইনালের প্রস্তুতি নিয়ে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না। গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস থেকে শুরু করে ব্রায়ান চার্লস লারা–ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের কাছে আমন্ত্রণ পৌঁছে গিয়েছে। যা খবর, কেনসিংটন ওভালে থাকছেন ওঁরা। থাকছেন ক্লাইভ লয়েডও।
ভারতীয় দল বেশ ফুরফুরে মেজাজে। দ্রাবিড় বলেও দিয়েছেন, ফাইনালের জন্য তাঁর টিম সবদিক থেকে প্রস্তুত। চিন্তা শুধু একটা ব্যাপার নিয়েই। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত রান পাননি বিরাট কোহলি। সেমিফাইনালেও ব্যর্থ হয়েছেন। তবে রোহিতরা বিশ্বাস করেন ফাইনালে বিরাট ঠিক রানে ফিরবেন।
রোহিত নিজে খুব ভাল ফর্মে। সূর্যকুমার যাদব শেষ কয়েকটা ম্যাচে নিজস্ব ছন্দে ব্যাটিং করেছেন। ঋষভ পন্থ রান করছেন। হার্দিক পাণ্ডিয়া গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দিচ্ছেন। জসপ্রীত বুমরা আগুন ঝরাচ্ছেন। কুলদীপ যাদব-অক্ষর প্যাটেলদের ঘূর্ণি চলছেই।
চলুক। এ রকমই চলুক। গোটা দেশ এখন একটাই প্রার্থনা–আর একটা ম্যাচ সবকিছু এরকমই চলুক। তাহলেই কাটবে এগারো বছরের খরা। যে দেশ বিশ্বকাপে রক্তাক্ত স্মৃতি উপহার দিয়েছিল ভারতকে এক সময়, সেখান থেকেই হোক না আর এক ইতিহাস। বিশ্বজয়ের ইতিহাস!