shono
Advertisement
Indian Railway

রেলের নন-টেকনিক্যাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে? রইল টিপস

স্নাতক বা দ্বাদশ পাশ হলেই বসতে পারবে রেলের নন-টেকনিক্যাল পরীক্ষায়।
Published By: Sayani SenPosted: 06:51 PM Oct 24, 2024Updated: 06:52 PM Oct 24, 2024

স্নাতক বা দ্বাদশ পাশ হলেই বসতে পারবে রেলের নন-টেকনিক‌্যাল পরীক্ষায়। শূন‌্যপদ ১১ হাজারের বেশি। প্রস্তুতি নেবে কীভাবে? লিখলেন অনিন্দ‌্য কিশোর।

Advertisement

মেরে স্বপ্ন কি রানি
শক্তি সামন্ত পরিচালিত আরাধনা সিনেমার সেই বিখ্যাত গান। দার্জিলিং পাহাড়ের বুক চিরে টয়ট্রেন চেপে শর্মিলা ঠাকুর চলেছেন। তার পাশের রাস্তায় রোমান্টিক নায়ক রাজেশ খান্না ও তার বন্ধু জিপে করে ট্রেনের সঙ্গে যেতে যেতে গান ধরেছেন - ‘মেরে স্বপ্ন কি রানি কব আয়েগি তু’। রেলের চাকরি পাওয়ার প্রস্তুতিতে হঠাৎ কেন এই গানের উল্লেখ করলাম, প্রশ্নটা আসা স্বাভাবিক। উত্তরে বলি, চাকরির বাজারে বর্তমানে যে মন্দা চলছে, তাতে নিদেনপক্ষে যে কোনও সরকারি চাকরি তো বটেই; যদি রেলে একটা চাকরি জোগাড় করে ফেলা যায় তা হলে তো সোনায় সোহাগা।

এই দুর্মূল্যের বাজারে যে কোনও বেকার তরুণ-তরুণীর কাছে রেলে চাকরি পাওয়া ‘স্বপ্নের রানি কিংবা রাজপুত্র’ পাওয়ার সমান। তাই আর দেরি না করে রেলে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির উপযুক্ত টিকিট কেটে উঠে পড়ো রেলগাড়িতে। আগামিদিনে তোমার জীবনযাত্রার সফর হবে মসৃণ। সম্প্রতি ভারতীয় রেল-রিক্রুটমেন্ট বোর্ড স্নাতক এবং উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য প্রায় ১১,৫০০-র বেশি শূন্যপদ ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে গ্র‌্যাজুয়েটদের জন্য ৮ হাজারের বেশি এবং উচ্চমাধ্যমিক ৩৪০০-র বেশি শূন্যপদ রয়েছে। প্রসঙ্গত, উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের আবেদনের শেষ তারিখ আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে। যারা এখনও আবেদন করোনি, শেষ সময়ে আবেদন করে দিতে পারো।

ইস্টিশানের রেলগাড়িটা মাইপা চলে ঘড়ির কাঁটা
ভারতীয় রেল ঘড়ির কাঁটা মেপে দৌড়য়, এ কথা স্বয়ং ভগবানও বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু রেলের চাকরির প্রস্তুতিতে রেলের এই জন্মগত রোগে তুমি যদি আক্রান্ত হও, তবে ‘স্বপ্নের রানি কিংবা রাজপুত্র’ পাওয়া তোমার দুঃস্বপ্নই থেকে যাবে। অতএব করণীয় কী? ঠিক ঠিক ফর্ম ফিল-ইন করে আজ থেকেই লেগে পড়ো তোমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। রেল তার জন্মগত স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে লেট করে চলুক। তোমাকে কিন্তু প্রস্তুতি নিতে হবে ঘড়ির কঁাটা মেপেই।
এখন দেখে নেওয়া যাক তোমার জন্য কী কী পদে চাকরি অপেক্ষা করছে। স্নাতকদের জন্য রয়েছে চিপ কমার্শিয়াল কাম টিকিট সুপারভাইজার, স্টেশনমাস্টার, গুডস ট্রেন ম্যানেজার, সিনিয়র ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট, জুনিয়র অ‌্যাকাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট ইত্যাদি। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩৬ বছরের মধ্যে। স্নাতকদের জন্য বেতন কিন্তু বেশ লোভনীয়। উপরের যে কোনও একটি চাকরি জোগাড় করতে পারলেই কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন ভাতা-সহ মাসে নিজের ব্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্টে শুরুতেই ঢুকতে পারে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

অপরদিকে, উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের জন্য রয়েছে জুনিয়র ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট, অ‌্যাকাউন্টস ক্লার্ক কাম টাইপিস্ট, ট্রেনস ক্লার্ক কাম টিকিট ক্লার্ক ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বয়সের সীমা ১৮ থেকে ৩৩ বছর। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণরাও বেতনের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। তাদের ক্ষেত্রে মাসমাইনে ৩০ থেকে ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

‘জরিমানা হইয়া যাইব যদি টানো চেনটা’
বিনা কারণে চেন টেনে রেলগাড়ি থামালে যেভাবে জরিমানা হয়, রেলে পরীক্ষা-প্রস্তুতিতে তোমার ফাঁকফোকর থাকলে নিজের জীবনই কিন্তু জরিমানা করে দিতে পারে। এই জরিমানা কীকরে এড়ানো যায়; অর্থাৎ তুমি কীভাবে প্রস্তুতি নেবে নিচে তারই একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা জানানো হল।

সম্পূর্ণ পরীক্ষাটা হয় দু’ধাপে। স্টেজ ওয়ান এবং স্টেজ টু। দুটো ধাপেই কম্পিউটার বেসড টেস্ট এবং মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন থাকে। স্টেজ ওয়ানের সিলেবাসে থাকে জেনারেল অ্যাওয়ারনেস (৪০নম্বর) ম্যাথমেটিক্স (৩০নম্বর) এবং জেনারেল ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড রিজনিং (৩০নম্বর)। এই ১০০ নম্বরের জন্য মোট প্রশ্নসংখ্যাও ১০০। সময় ৯০মিনিট। প্রশ্নপত্র ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা-সহ আরও একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় করা হয়। যে যে রাজ্যে তুমি পরীক্ষা দিতে চাইছ, সেই রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা সেখানকার প্রশ্নপত্রে
গুরুত্ব পায়।

প্রস্তুতির বিস্তারিত
যে কোনও সরকারি চাকরির পরীক্ষার সাফল্যের একটা বড় অনুশীলন হচ্ছে বিগত বছরগুলির প্রশ্নপত্রকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা। তোমাদের সুবিধার জন্য বিগত বছরগুলির প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে নিচে কোন কোন বিষয় থেকে কতগুলি করে প্রশ্ন এসেছিল তার একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে দেওয়া হল। ব্র‌্যাকেটে দেওয়া হল প্রশ্নসংখ্যা। জেনারেল অ্যাওয়ারনেস (৪০নম্বর) – ইতিহাস (৬-৭), ভূগোল (৫), রসায়ন (১-২), জীববিদ্যা (৩-৪), পদার্থবিদ্যা (২-৩)কম্পিউটার (৪),সংবিধান (১-২),স্ট্যাটিক জিকে (৮-৯) ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি (১১-১২)। ঠিক একইরকমভাবে অঙ্কের (৩০নম্বর) ক্ষেত্রে যে যে চ্যাপ্টারগুলি থেকে প্রশ্ন আসে তার নমুনা খানিকটা এরকম। শতকরা (১), সংখ্যা (৩), লসাগু ও গসাগু (২-৩), সময় ও কার্য (২-৩), সরল সুদ ও যৌগিক সুদ (২-৩), সময় ও দূরত্ব (৩), লাভ-ক্ষতি (২), পরিমিতি (১) ত্রিকোণমিতি (২-৩), গড় (১-২),বর্গমূল (২),অনুপাত (১-২) ইত্যাদি। জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ও রিজনিং (৩০নম্বর) থেকে যে যে বিষয়গুলি থেকে প্রশ্ন আসে তা খানিকটা এরকম।
পাজেল (৩), ভেনডায়াগ্রাম (৩), সাইলোগিজম (৩), সেনটেন্স অ‌্যারেঞ্জমেন্ট (৩), স্টেটমেন্ট অ‌্যাজামশান (১), স্টেটমেন্ট কনক্লুশন (২), আলফা নিউমেরিক সিরিজ (১), অ‌্যানালজি (১), ম্যাথমেটিক্যাল অপারেশন (৩), ডাইরেকশন সেন্স (২), ব্লাড রিলেশন (১), অডওয়ান আউট (২), সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট (১), কোডিং-ডিকোডিং (১) ইত্যাদি।

কীভাবে পড়ব
এর পরের ধাপ হল ঘড়ি ধরে নিয়ম করে শুধু পড়া আর পড়া। কিন্তু কীভাবে পড়ব? দু’রকমভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। সরকারি চাকরি প্রস্তুতির জন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে ভর্তি হয়ে যাওয়া। কিংবা নিজের এলাকাতেই খোঁজখবর নিয়ে অভিজ্ঞ কোনও শিক্ষকের অধীনে নিয়মিত চর্চা করা। এখন আবার অনলাইনেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার্থীর সিলেবাস পেশাগতভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করে থাকে। নিজের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্তটা নিয়ে যে কোনও একটি জায়গায় ভর্তি হয়ে যাওয়া যেতে পারে। আর অন্যদিকে যদি নিজের স্থির করো যে, নিজে নিজেই পড়বে তাতেও হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজের দায়িত্বটা একটু বেশি। নিজে পড়ার যেমন সুবিধাও আছে, বেশ কিছু অসুবিধা আছে। কোনওমতেই নিজের পড়ার গতি থামালে চলবে না।

ভাল বই, পড়বই
নিজেই পড়ো বা কোনও প্রতিষ্ঠানের অধীনে পরীক্ষা প্রস্তুতি নাও, বেশ কিছু বই কিন্তু তোমার সঙ্গী করতেই হবে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি যেহেতু এটি একটি সর্বভারতীয় পরীক্ষা, দেখা গিয়েছে, প্রশ্নকর্তারা এনসিইআরটি সিলেবাস অনুসরণ করেন। তাই এনসিআরটি বেসড কোনও বই বা তার সংকলন পড়া যেতে পারে। এই ধরনের প্রস্তুতিতে অনেক নামী এবং উঠতি প্রকাশনী সংস্থার বেশ কিছু ভাল বই কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় খোঁজ নিলে পেয়ে যাবে। কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় কফি হাউজের আশপাশে, সংস্কৃত কলেজের কাছে বেশ কিছু নাম করা বইয়ের দোকান আছে। যারা শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির উপযুক্ত একাধিক বইয়ের সম্ভার রাখে। উপযুক্ত মানের খানপাঁচেক বই কিনে নিতে পারো। এই বইগুলি বিগত বছরের প্রশ্নপত্র-সহ পরীক্ষার উপযুক্ত সিলেবাস অনুযায়ী লিখিত। কিরণ প্রকাশনী, জয়শ্রী প্রকাশনী, তুলসী প্রকাশনীর বইগুলি নেড়েচেড়ে দেখতে পারো। ম্যাকগ্রোহিল প্রকাশনীরও এনসিইআরটি বেসড বিষয়ভিত্তিক বেশ কিছু ভাল বই আছে। যদিও এই বইগুলি ইংরেজিতে এবং গুণগত মানে বেশ উঁচু দরের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • স্নাতক বা দ্বাদশ পাশ হলেই বসতে পারবে রেলের নন-টেকনিক্যাল পরীক্ষায়।
  • শূন্যপদ ১১ হাজারের বেশি।
  • কঠিন অধ্যবসায় মিলতে পারে সাফল্য।
Advertisement