সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘মা আমি শ্বাস নিতে পারছি না, খুব কষ্ট হচ্ছে’। এটাই ছিল ফাম থি ট্রা মাই-র পাঠানো শেষ মেসেজ। তারপর আর ওই যুবতীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। লন্ডনে উদ্ধার হওয়া অভিশপ্ত ট্রাকের খোলে পাওয়া যায় ফামের জমে কাঠ হয়ে যাওয়া মৃতদেহ।
‘হিউম্যান রাইটস স্পেস’ নামের ভিয়েতনামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মতে, মৃত ফাম থি ট্রা মাই ভিয়েতনামের নাগরিক। পরিবারের তরফে ফামের পাঠানো মেসেজটিও পেয়েছে তারা। বেলজিয়াম থেকে ব্রিটেনের দিকে যখন ট্রাকটি রওনা দেয়, সম্ভবত তখনই কন্টেনারের ভিতর অক্সিজেন ফুরিয়ে আসতে শুরু করে। এবং আসন্ন মৃত্যুর কথা বুঝতে পেরেই মায়ের মোবাইলে ওই মেসেজটি পাঠায় ফাম। সেখানে লেখা ছিল, ‘মা-বাবা, আমার বিদেশযাত্রা সফল হয়নি। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি যা করেছি তার জন্য আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাদের খুব ভালবাসি।’ মনে করা হচ্ছে, ভিয়েতনাম থেকে কাজের খোঁজে চিনে যান ফাম। সেখান থেকে ফ্রান্স হয়ে ইংল্যান্ডে প্রবেশ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। তবে নিয়তি যে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে তা তিনি বুঝতে পারেননি।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির দাবি, মৃতদের মধ্যে অন্তত ১০ জন ভিয়েতনামের নাগরিক। লন্ডনে নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, দেশে অনেকেই নিখোঁজ পরিজনদের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইছেন। এদিকে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে লন্ডন পুলিশ। তাদের জেরা করা হচ্ছে। ট্রাকটির ড্রাইভের মো রবিনসনকে এখনও জেরা করা হচ্ছে। লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, ৩৯ জন মৃতের প্রায় সবাই চিনা নাগরিক। তবে চিনা দূতাবাস জানিয়েছে, মৃতদের পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বুধবার লন্ডনের এসেক্সে ৩৯টি মৃতদেহ সমেত একটি ট্রাক উদ্ধার করে পুলিশ। উল্লাস মুখর শহরটি কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় আতঙ্কে। তদন্তে জানা যায়, মৃতদেহ ভরতি কন্টেনারটি চিন থেকে প্রায় ৫ হাজার মাইল সফর শেষ করে বেলজিয়াম হয়ে জলপথে পূর্ব লন্ডনে ঢুকেছিল। কন্টেনারটি দুবার ইংলিশ চ্যানেল পার করে। দীর্ঘযাত্রা পথই স্পষ্ট বলে দেয় যে বেশ কয়েকদিন ধরেই কন্টেনারটির ভিতরে বন্ধ ছিল হতভাগ্যরা। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ও অক্সিজেনের অভাবে দমবন্ধ হয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারের সময় মৃতদেহগুলি জমে কাঠ হয়ে ছিল। তদন্তকারীর মনে করছেন, চিন থেকে মানব পাচারকারীদের সহজয়ে অবৈধভাবে লন্ডনে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলেন চিনা নাগরিকরা। তবে আসন্ন ব্রেক্সিটের দরুণ সীমান্তে কড়া নজরদারির জেরে সময়মতো লন্ডনে পৌঁছাতে পারেনি ট্রাকটি। ফলে প্রাণ দিতে হয় ভিতরে বন্ধ ৩৯ জনকে।
[আরও পড়ুন: আদিবাসীদের পবিত্র স্থানে পা রাখতে নিষেধাজ্ঞা, শেষবারের মতো পাহাড়ে পর্যটক দল]
The post ‘শ্বাস নিতে পারছি না মা’, লন্ডনের অভিশপ্ত ট্রাক থেকে শেষ মেসেজ তরুণীর appeared first on Sangbad Pratidin.