সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ‘নন্দকুমার’ মডেল পঞ্চায়েতেও! পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে মরিয়া বিজেপি। ফলে যে কোনও বিরোধী দলের সঙ্গেও আঁতাত করতে রাজি সাংসদ তথা দলের রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক সৌমিত্র খাঁ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাজিত করতে কোনওরকম ছুঁৎমার্গ করবে না বিজেপি, দুর্গাপুরে বিজেপির রাঢ় বঙ্গ জোনের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠকের পর এমন মন্তব্য করলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। মঙ্গলবার দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বিজেপির মূল কার্যালয়ে বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া নিয়ে গঠিত রাঢ়বঙ্গ জোনের বিধায়ক, সাংসদদের নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে এক বৈঠকে বসেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সেখানে ছিলেন রাঢ়বঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণচন্দ্র ঘড়ুই, পুরুলিয়ার বিধায়ক নরহরি মাহাতো-সহ অন্যান্য নেতারা। বৈঠক শেষে রাঢ়বঙ্গের বিজেপির পর্যবেক্ষক সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে হারাতে স্থানীয়স্তরে যদি বিজেপি কর্মীরা তৃণমূল বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করে, আমরা যাঁরা নেতৃত্বে আছি তাঁরা অন্তরায় হব না।” তৃণমূলকে হারাতে প্রয়োজনে বাম কিংবা অন্য যে কোনও বিরোধী দলের সঙ্গে জোট করব।
[আরও পড়ুন: ২০১৯ সাল থেকে অনুব্রত ও সুকন্যার অ্যাকাউন্টে লটারির মোটা টাকা! চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল CBI]
এদিন একের পর এক একাধিক ইস্যুতে সৌমিত্র খাঁ (Saumitra Khan) তোপ দাগেন তৃণমূল নেতৃত্বকে। তিনি বলেন, “সিআইডি তো তৃণমূলের মালা পড়ে নিয়েছে। সিবিআইয়ে আস্থা রাখতে হবে। একদিন না একদিন সব ধরা পড়বে। দক্ষিণের জয়ললিতা, মায়াবতীকে জেল খাটতে দেখেছি। লালুও জেল খাটছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীও জেল খাটবে নিশ্চিত করে বলা যায়।” এসএসসি উত্তীর্ণ আন্দোলনকারী চাকরি প্রার্থীদের পাশে থেকে লোকসভা নির্বাচনে আওয়াজ তুলবেন বলেও দুর্গাপুরে দলীয় কর্মসূচি থেকে বলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) চোরেদের চাকরি রেখে আন্দোলন করার বার্তা দিচ্ছেন। তাঁদের চাকরি গেলে কোটি কোটি টাকা চাকরি নিয়ে দুর্নীতির কৈফিয়ত চাইবে।” লটারি দুর্নীতি প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ভাইপো বন্দ্যোপাধ্যায়’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, “প্রতি সপ্তাহে ১০ কোটি টাকা যাচ্ছে তাঁর ঘরে। রানিগঞ্জে কয়লা লিফটিংয়ে টন প্রতি তিনশো টাকা করে পান তিনি।”
প্রসঙ্গত, রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার-বহরমপুর সমবায় সমিতির ভোটগ্রহণ হয়। এর আগে বামমনস্করাই ৬৩টি আসন বিশিষ্ট এই সমিতি পরিচালনা করতেন। যার মধ্যে ৫২টি আসনে তৃণমূল হিসেবে চিহ্নিত প্রার্থীরা মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ২০টি আসনে বিজেপি হিসেবে চিহ্নিত প্রার্থীরা মনোনয়ন দেন। পরে অবশ্য এই সমস্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারও করে নেন তাঁরা। মোট ৫২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় বামমনস্ক পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও কমিটি। বাকি ১১টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। সবক’টিই নিজেদের দখলে রাখে কমিটি। ভোটের ফলপ্রকাশের পর ৬ জন জয়ী পদপ্রার্থী আবার নিজেদের বিজেপি (BJP) বলে দাবি করেছেন। ফলে সমবায় সমিতির ৬৩টি আসন তৃণমূল শূন্য, বিরোধীদের দখলে। বলা হচ্ছে, বাম ও বিজেপি হাত মিলিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। আসন্ন নির্বাচনেও সেভাবেই তৃণমূলকে হারাতে চাইছে বিজেপি। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।