দীপঙ্কর মণ্ডল: বঙ্গবাসীকে শারদ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। বৃহস্পতিবার বোধনের সকাল। প্রদেশ এবং জাতীয় স্তরের তাবড় বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা হাজির সল্টলেকের ইজেডসিসি অডিটোরিয়ামে। আমন্ত্রণ পেয়েও হাইপ্রোফাইল এই ভারচুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেননি দলের বর্ষীয়ান নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় ও অধ্যাপক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
সকাল থেকেই এদিন বিজেপির অন্দরে সাজ সাজ রব। নয়াদিল্লিতে ধুতি-পাঞ্জাবি-উত্তরীয় পরিহিত প্রধানমন্ত্রী। কলকাতায় বিজেপি নেতারা টানটান হয়ে বসে। গেরুয়া দলের নেত্রীরাও একটি করে আসন ছেড়ে বাঙালি পোশাকে অপেক্ষায়। দুপুর বারোটা। শঙ্খ ও উলু ধ্বনিতে আবেগময় পরিবেশ। কিন্তু হলঘরে নেই শোভন-বৈশাখী। বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, দু’জনকেই আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, বিজেপির আন্তরিকতা নিয়ে শোভন-বৈশাখীর মনে ধন্দ রয়েছে। আর তাই মুখ্যমন্ত্রীর ভাইফোঁটা বা চলচ্চিত্র উৎসবে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর পুজোর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত দু’জনেই। তৃণমূলের যেকোনও বৈঠকেই শোভন থাকতেন সামনের সারিতে। এমনকী বৈশাখীকেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চে বক্তৃতা দিতে দেখা গিয়েছে। দর্শক হিসেবে আলঙ্কারিক উপস্থিতিতে যে দুজনে উৎসাহী নন, তা স্পষ্ট করে দিতেই কি এদিন অনুপস্থিত তাঁরা? উত্তর মেলেনি।
[আরও পড়ুন: শূন্যতার মাঝে আবাহনের সুর, পুজোয় আলোকমালায় সেজেছে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন]
বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সকাল থেকে ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তাহলে কেন যোগ দিলেন না বৈঠকে? রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, বৈশাখীর উৎসাহেই ভাইফোঁটা এবং চলচ্চিত্র উৎসবের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন শোভন। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভারচুয়াল বৈঠক নিয়ে নির্লিপ্ত ছিলেন বৈশাখী। প্রসঙ্গত, বিজেপির রাজ্য কমিটিতে তাঁর নাম মৌখিকভাবে ঘোষণা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও তা জানানো হয়নি। এই কারণেই কি বিজেপি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছেন বৈশাখী? তাঁর এদিনের ফেসবুক স্টেটাস, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
ফেসবুকে বৈশাখী জানিয়েছেন, কালীঘাটের সঙ্গে শারদ উপহার বিনিময় হয়েছে তাঁদের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) দুজনের জন্যই পোশাক পাঠিয়েছেন। শোভনের জন্য কুর্তা-পাজামা এবং বৈশাখীর জন্য শাড়ি এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। মুখ্যমন্ত্রীকেও শাড়ি পাঠিয়ে পালটা শারদ উপহার দিয়েছেন তাঁরা। শোভনবাবু আপাতত চুপ। প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। তবে জনসংযোগ থেমে নেই। দক্ষিণ কলকাতার যে বহুতলে তিনি থাকেন, সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফোনে ব্যস্ত। অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী দেখাও করতে আসেন। বিজেপি এবং তৃণমূল দুই তরফই ২০২১-কে পাখির চোখ করেছে। দু’দলেরই নেতা-কর্মীদের একটি অংশ চাইছে তাদের হয়ে মাঠে নামুন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। বিজেপি হাই কমান্ডের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, যে দল যোগ্য সম্মান দেবে তার হয়েই ব্যাট করবেন পোড়খাওয়া এই নেতা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এদিন বৈশাখীর পোস্ট জল্পনা বাড়িয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি উপহার পাওয়ার জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, প্রয়াত জননেত্রী জয়ললিতা ভাইজ্যাগের যে গ্রামে তৈরি শাড়ি পরতেন, সেই শাড়ি পালটা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে।