shono
Advertisement

অভিশপ্ত এই গ্রামের সব মানুষ ডাইনি!

গ্রাম কে গ্রাম কী ভাবে ডাইনি হয়ে যায়? না কি এই গ্রামকে বসবাসের উপযুক্ত বলে বেছে নিয়েছিল ডাইনিরাই? The post অভিশপ্ত এই গ্রামের সব মানুষ ডাইনি! appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:37 PM Aug 09, 2016Updated: 06:07 PM Aug 09, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাঝে মাঝেই খবর আসে বটে, ভারতের অমুক গ্রামে ডাইনি সন্দেহে পুড়িয়ে মারা হল এক ব্যক্তিকে! কখনও বা সংখ্যাটা একটু বেড়ে যায়। একের জায়গায় দেখা যায় দুই বা তিন; গোটা পরিবারকেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ সব ঘটনায় সারা গ্রামের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে থাকেন কোণঠাসা মানুষেরা। মূলত কুসংস্কার আর শিক্ষার অভাবই প্রতিহিংসার বেশে আছড়ে পড়ে সেই সব হতভাগ্যের উপর! মাঝে মাঝে একটি বিশেষ অঞ্চলে এত বার এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে যে সেই অঞ্চলের নামই হয়ে যায় ডাইনিদের গ্রাম। ঝাড়খণ্ডে এরকম এক ডাইনিদের গ্রাম আছে। মাঝে মাঝেই সেই গ্রামের অনেককে পুড়িয়ে মারেন বাকিরা ডাইনি সন্দেহে!

Advertisement


এরকম ঘটনার থেকে একটু অন্য চোখে দেখতে হবে স্পেনের ডাইনি গ্রামকে। গ্রামের নাম ত্রাসমোজ। যে গ্রামের সবাই ডাইনি! সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠবে- গ্রাম কে গ্রাম কী ভাবে ডাইনি হয়ে যায়? না কি এই গ্রামকে বসবাসের উপযুক্ত বলে বেছে নিয়েছিল ডাইনিরাই?
প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে ত্রাসমোজ কেল্লায়। ত্রয়োদশ শতকের এই কেল্লার কিছু ইট-পাথর মাত্র অবশিষ্ট আছে। পাহাড়ের চূড়ায় এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে তারা। আর বলে চলে ত্রাসমোজ গ্রামের বাসিন্দাদের ডাইনি হয়ে ওঠার ইতিহাস।


ত্রয়োদশ শতকে ত্রাসমোজ ছিল খুব বিচ্ছিন্ন এক লোকালয়। চার দিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এক নিচু উপত্যকা। সভ্যতার সঙ্গে যার সম্পর্ক খুব একটা নেই বললেই চলে। সেই জন্যই আরব, ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা মিলেমিশে শান্তিতেই থাকত সেখানে। ইহুদিদের সংখ্যাই ছিল বেশি। না সেখানে ছিল রাজার শাসন, না শাসন ছিল ধর্মের। শুধু স্থানীয় এক সামন্ত রাজা বাস করতেন কেল্লায়, শাসন করতেন ত্রাসমোজ।এই রাজা একদিন ঠিক করলেন, তিনি নকল মুদ্রা বানিয়ে কর ফাঁকি দেবেন। কিন্তু সেই কাজ করতে হবে গোপনে। অতএব, রাতারাতি বন্ধ হল কেল্লার দরজা। জানলাতেও কপাট পড়ল। আর, কেল্লার ভিতর থেকে ভেসে আসতে লাগল ধাতু পেটানোর আওয়াজ। সেই আওয়াজ শুনে কৌতূহলী গ্রামবাসী যখন ভিড় জমাল কেল্লার সামনে, তখন তাদের বলা হল ডাইনিদের খুরে এই আওয়াজ উঠেছে। তারা কেল্লায় আসে, থাকে, রাজাকে শিখিয়ে যায় গুপ্ত ডাইনিবিদ্যা।


সব শুনে মাথা ঘুরে যায় সহজ-সরল গ্রামবাসীদের। তারাও তাদের রাজার মতো শিখতে চায় ডাইনিবিদ্যা। সেই শুরু! দেখতে দেখতে গোটা ত্রাসমোজ গ্রাম মেতে ওঠে ডাইনিবিদ্যার চর্চায়। ঘরে ঘরে শুরু হয় ডাকিনীতন্ত্রের অনুশীলন। পুরো গ্রাম বদলে যায় ডাইনিদের ভিড়ে।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে ডাইনি নারী এবং পুরুষ- দুই হয়। ডাইনি ভালও হয়, মন্দও হয়। কাজেই ডাইনিবিদ্যার চর্চা করছে বলেই যে ত্রাসমোজবাসীকে ভয়ানক কিছু ভাবতে হবে, তার কোনও মানে নেই!
ও দিকে, একটা সময়ে খবরটা গিয়ে পৌঁছল নিকটবর্তী ভেরুয়েলার গির্জায়। সেটা ১৫১১ সাল। ধর্মযাজকরা ভিড় করে এলেন গ্রামে। ঘুরে-ফিরে দেখলেন সব কিছু। এবং, আদায় করতে চাইলেন ধর্মীয় কর। পাশাপাশি, প্রায়শ্চিত্তের নিদান দিলেন গ্রামবাসীর জন্য।


কিন্তু, গ্রামবাসী এবং তাঁদের রাজা- কেউই ধর্মযাজকদের কথা মানতে রাজি হল না। বিশেষ করে গ্রামবাসীরা তো মানতেই চাইল না যে তারা কিছু ভুল কাজ করছে!
তখন, ধর্মযাজকরা অভিশাপ দিলেন ত্রাসমোজের সবাইকে। তাদের কারও অস্তিত্ব থাকবে না। উজাড় হয়ে যাবে ত্রাসমোজ গ্রাম এবং তাদের ডাকিনীবিদ্যার অনুশীলন। পোপ ছাড়া যে অভিশাপ খণ্ডানোর সাধ্য কারও নেই!
কার্যত, ধর্মযাজকদের কথা সত্যি হল। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে এক ভয়ঙ্কর আগুনে ছাই হয়ে গেল ত্রাসমোজের কেল্লা। এক করাল মহামারীর গ্রাসে জনসংখ্যা কমে গেল অনেকটাই। আর ইহুদিদের যখন বিতাড়িত করা হল স্পেন থেকে, মাত্র ৬২টি পরিবার পড়ে রইল গ্রামে। এখনও ত্রাসমোজে কোনও স্কুল নেই, দোকানপাট নেই! থাকার মধ্যে আছে বলতে একটা পানশালা! রাস্তাগুলোও ফাঁকা ধু-ধু করে!


তবে, ডাইনিবিদ্যার চর্চা কিন্তু বন্ধ হয়নি ত্রাসমোজে। তা এখনও সাড়ম্বরে বহাল আছে। প্রতি বছর জুনে এখানে ডাইনিদের এক মেলা বসে। সেই উৎসবের নাম ফেরিয়া দে ব্রুজেরিয়া। সেখানে বিক্রি করা হয় শিকড়-বাকড় থেকে তৈরি নানা জাদু নির্যাস। যা দুরারোগ্য ব্যাধিমুক্তিরও সহায়ক হয়! পাওয়া যায় বিপদ-আপদ দূর করার নানা টোটকাও!
এই গ্রামের ডাইনিরা তখনও যেমন, এখনও তেমন মানুষের উপকারই করে!

The post অভিশপ্ত এই গ্রামের সব মানুষ ডাইনি! appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement