সব্যসাচী বাগচী: এলেন। দেখলেন। জয় করলেন। একমাত্র গোলদাতা নন্দকুমারের (Nandhakumar Sekhar) সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) নতুন কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাতের (Carles Cuadrat) পক্ষে এই কথা অনায়াসে খেটে যেতে পারে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে দিলেন হিসেব-নিকেশ। মেগা ডার্বির (Kolkata Derby) আগে সাংবাদিক বৈঠকে কুয়াদ্রাত দলের ‘অস্ত্র’দের নিয়ে কথা বলছিলেন। তখনও বোধহয় কেউ আঁচ করতে পারেননি যে শনিবার তাঁর হাত ধরেই মহাকাব্যিক কামব্যাক অপেক্ষা করছে লাল-হলুদ ব্রিগেডের। ম্যাচের আগে মোহনবাগানকে (Mohun Bagan) কৃতিত্ব দিলেও মনের মধ্যে যাবতীয় হিসেব ততক্ষণে বোধহয় কষে ফেলেছিলেন একদা বেঙ্গালুরু এফসি-কে (Bengaluru FC) আইএসএল (ISL) জেতানো। আর এবার লাল-হলুদের কোচ হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই মোহনবাগানকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এর আগে ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে অভিষেক ডার্বি ম্যাচেই জিতেছিলেন আলেজান্দ্রো মেনেন্দেস। তিনি লাল-হলুদের কোচ হিসেবে খুব সফল বলা যাবে না। কিন্তু এসেই সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। এবার সেই পথে সারথি হলেন আরও এক স্প্যানিশ কোচ। কিন্তু ভিন রাজ্যের হয়ে সফল হওয়া আর কলকাতায় এসে প্রথম ম্যাচেই ডার্বি জেতা, একদম আলাদা বিষয়। তবে প্রথম ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়ে আর এক স্প্যানিশ জুয়ান ফেরান্দোকে টেক্কা দিলেন।
[আরও পড়ুন: Durand Cup Derby 2023: বদলার ডার্বিতে অন্য ইস্টবেঙ্গল, নন্দকুমারের গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে জয়ের সরণীতে লাল-হলুদ]
এরপর মেগা ডার্বি জয়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দল এবং সমর্থকদের জন্য সত্যিই আজ আমি খুশি। দল হিসেবে খেলেছি আমরা। মোহনবাগান অনেক বড় টিম। ওদের স্টার ফুটবলাররা আছে, তবে আমরা আজ ভালো ফুটবল খেলেছি। একেবারে দলীয় প্রচেষ্টায় এই জয় এসেছে বলব। আমাদের পরের টার্গেট ডুরান্ডে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া। আমাদের পাঞ্জাব এফসিকে হারিয়েই পরের রাউন্ডে যেতে হবে।”
এর আগে বার্সেলোনা যুব দলের হয়ে কোচিং করেছিলেন। এবার কলকাতায় পা দিয়ে সমর্থকদের কাছে আকাশ কুসুম কিছু বলেননি। তিনি বরং মাটিতে পা রেখে বলেছিলেন, “আমরা খেলায় ৯০ মিনিট লড়ব। কেউ বলতে পারবে না আমরা খেলতে পারিনি। হারা জেতা আমার হাতে নেই, আমি বরং চেষ্টা করতে পারি ছেলেদের নিয়ে।” কথা রাখলেন তিনি।
[আরও পড়ুন: Nandhakumar Sekhar: প্রথম গোল করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে, সেই নন্দকুমারের পায়েই লাল-হলুদের শাপমুক্তি]
যদিও রেফারিং নিয়ে কিন্তু একেবারেই খুশি নন কুয়াদ্রাত। ম্যাচে মোহনবাগান একাধিক খারাপ ট্যাকল করলেও কার্ড দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি ফের যোগ করেন, “আমার কাছে একটা ব্যাপার অদ্ভুত লেগেছে। এখানে নিয়ম এবং রেফারিংয়ের কোনও ধারাবাহিকতা নেই। গোটা ম্যাচে আমরাই একমাত্র হলুদ কার্ড দেখেছি। ওদের কেউ হলুদ কার্ড দেখেনি। অথচ বেশ কিছু ট্যাকল ওরা করেছে যেগুলো কার্ড দেখার মতোই।”
সেটা যে শনিবার সন্ধ্যায় পরিষ্কার দেখা গেল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ৫৭ বছর বয়সি কোচ দলের বেশ কিছু দেশীয় তারকাদের নিয়ে বাজিমাত করলেন। তিনি সেই ফুটবলারদের ওপর আস্থা রেখেছেন যারা গত তিন সপ্তাহ ধরে অনুশীলন করেছেন। তিনি জানতেন ফিটনেস এই ধরনের বড় ম্যাচে প্রধান ফ্যাক্টর হতে পারে। তাই তিনি খাবরা, নন্দ কুমার, সুহেরদের ওপর ভরসা করেছিলেন। কার্লোসের মতো অভিজ্ঞ কোচ এও জানতেন একজন বিদেশি ফুটবলার কখনই শুরুতে এই খেলার গুরুত্ব বুঝবেন না। তাই বিপক্ষকে ক্লেটন সিলভার নাম শুনিয়ে রাখলেও, আসল সময় তিনি তাঁর তারকা ফুটবলারকে লুকিয়ে রাখলেন, যাতে আগামী সময় কেল্টনের মতো স্ট্রাইকারকে একেবারে তরতাজা পাওয়া যায়।