কৃশানু মজুমদার: ”লিটন দাস (Liton Das) কি ডাকাবুকো স্বভাবের? প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল নাজমুল আবেদিন ফাহিমের (Nazmul Abedeen Fahim) কাছে।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে তিনি বললেন, ”একেবারেই নয়। খুব মিতভাষী ছেলে ও। লিটন যদি ডাকাবুকো হত, তাহলে হয়তো ম্যাচটা আমরাই জিততাম।”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন লিটনের মেন্টর কাম কোচ। একটু ভুল হল। শুধু লিটন নন, বাংলাদেশ অধিনায়ক শাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan), মুশফিকুর রহিমদের মতো তারকাদেরও তিনি ‘দ্রোণাচার্য’। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর প্রায় দুই দশকের সম্পর্ক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে কাজ করেছেন প্রায় পনেরো বছর। বাংলাদেশ (Bangladesh) ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। ভারতের বিরুদ্ধে লিটনের ব্যাটিং দেখে তিনি বিস্মিত। এই অবতারে যে তিনি আগে কখনও দেখেননি তাঁর শিষ্যকে।
[আরও পড়ুন: খাদের কিনারা থেকে ফিরে এল পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভেসে রইল বিশ্বকাপে]
অ্যাডিলেড ওভালে লিটন দাসের ঝোড়ো ব্যাটিং একসময়ে আতঙ্কের কালো মেঘ উড়িয়ে এনেছিল ভারতের সাজঘরে। লিটনকে থামানোর অস্ত্র জানা ছিল না ভুবনেশ্বর, অর্শদীপদের। কিন্তু ‘গুরু’ ভাল মতোই চেনেন তাঁর শিষ্যকে। তাই বৃহস্পতিবার নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলছেন, ”বাস্তব জীবনে তুমি কেমন, তার ছবি ফুটে ওঠে খেলার মাঠে। লিটন ডাকাবুকো স্বভাবের নয় একেবারেই। যদি হতো তাহলে ভালই হতো। বাস্তব জীবনে লিটন বেহিসেবি নয়। আক্রমণাত্মকও নয়। কিন্তু অ্যাডিলেডে যে ব্যাটিং ও করেছে, সেটাই ওর আসল খেলা হওয়া উচিত। লিটন যে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে পারে, এই বিশ্বাস ওর মধ্যে জন্মানো দরকার ছিল। আমার মনে হয়, ভারতের বিরুদ্ধে ওর ইনিংস, ওর ব্যাটিং এই বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে ইতিমধ্যেই। আগামিদিনেও যেন এভাবেই খেলে যায় লিটন।”
ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ শেষ হয়েও যেন শেষ হয়নি! পদ্মাপাড় এখনও উত্তেজিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে চর্চা। ‘ভেজা মাঠে নামতেই চায়নি বাংলাদেশ। জোর করে নামানো হয়েছে শাকিবদের।’ ‘হার্দিক পান্ডিয়ার শেষ বল ওয়াইড থাকলেও তা দেননি আম্পায়ার।’ ‘ভারত ফেক ফিল্ডিং করায় ৫ রান পেনাল্টি প্রাপ্য ছিল বাংলাদেশের।’ ‘ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে হিসেবে গন্ডগোল ছিল।’ বুধবার অ্যাডিলেডে ভারতের কাছে হারের পর এমনই সব অভিযোগ ভেসে আসছে ওই বাংলা থেকে। ভারতের কাছে হারের পর এবার আইসিসির দ্বারস্থ হতে চলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সব মিলিয়ে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি মুজিবের দেশে। লিটনের মেন্টর যুক্তি দিয়ে বলছেন, ”আম্পায়ারদের কাজ হল ম্যাচটাকে বড় করা। যদি মাঠ ভিজে থাকত, তাহলে আরও একটু সময় নিতেই পারতেন আম্পায়াররা। সাধারণত, বৃষ্টিভেজা মাঠে যে দল ফিল্ডিং করে সেই দল কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়ে। কিন্তু অ্যাডিলেডে বৃষ্টির পরে লিটন যখন ব্যাট করতে নেমেছিল তখন ওর বুটে ঘাস আর জলকণা আমি দেখেছি। মাঠ যে ভিজে ছিল, এটা কিন্তু তার প্রমাণ হতে পারে।”
বৃষ্টির পরে বাংলাদেশের জন্য জেতার সমীকরণ বদলে গিয়েছিল। তার আগে ভারতের রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ দৌড়চ্ছিল। তখন সত্যি সত্যি ব্যাকফুটে রোহিত শর্মারা। কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না ভারতের। ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। সেইসময়েই বৃষ্টি নামে। তার পরে ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে মোড় নেয়। লিটন দাস রান আউট হয়ে গেলেন। একে একে উইকেট হারাল বাংলাদেশ। ম্যাচ থেকেও ছিটকে গেল। নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলছিলেন, ”রান আউট যখন হয় লিটন, তখন দৌড়তে গিয়ে পিছলে গিয়েছিল। ও যদি টিকে থাকত, তাহলে ম্যাচটা জেতা কঠিন হতই না। আর বৃষ্টির পরে যখন নতুন করে খেলা শুরু হল, সেই সময়ে পার্টনারিশপ না গড়ে মারমুখী ব্যাটিং করার দিকে ঝুঁকে পড়ে বাংলাদেশ। ২০ ওভার খেলা হলে পার্টনারশিপ হয়তো গড়ত ব্যাটসম্যানরা এবং ম্যাচটা জিতেও যেত।”
কিন্তু বরুণদেবতা ঝরে পড়ার ফলে বাংলাদেশের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ম্যাচ ঢলে পড়ে ভারতের দিকে। ট্র্যাজিক হিরো হয়ে থাকলেন লিটন দাস। বাংলাদেশ ওপেনারের কোচ বলছিলেন, ”লিটন খুব স্কিলফুল খেলোয়াড়। শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ সামলে আগেও অনেক ভাল ইনিংস খেলেছে। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে ইনিংসটা সব অর্থেই অন্যরকম। ব্যাট করার সময়ে ওর মস্তিষ্কে কী চলছিল, তা দেশে ফেরার পরে জিজ্ঞাসা করব।”
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে পাকিস্তান উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকায় তিন নম্বরে। বাংলাদেশ নেমে গিয়েছে চারে। আগামী রবিবার একইসঙ্গে ভাগ্য নির্ধারিত হবে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের। সেদিন পাকিস্তানের সামনে লিটন-শাকিবের বাংলাদেশ। লিটন কি ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারবেন পাক-বোলিং আক্রমণকে? ভারত-ম্যাচের দুঃস্বপ্ন দূরে সরিয়ে তাঁর ‘গাণ্ডীব’ কি কথা বলবে? সময় এর উত্তর দেবে। তবে রবিবাসরীয় পাক-বাংলাদেশ মহারণে শিষ্যর ব্যাটের দিকেই যে থাকবে গুরুর চোখ, তা বলে দেওয়াই যায়।
[আরও পড়ুন: আম্পায়ার এবং কোহলির বিরুদ্ধে ক্ষোভ, ম্যাচ হেরে আইসিসির কাছে নালিশের পথে BCB]