ইটালি–১ (৩)(বোনুচ্চি)
ইংল্যান্ড–১ (২) (লুক শ)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওয়েম্বলিতে ইউরো ফাইনালের বল গড়ানোর আগেই উইম্বলডনে হৃদয় ভেঙেছে ইটালির টেনিস তারকা মাতেও বেরেত্তিনির। নীল জার্সির সমর্থকদের মনে তখন হয়তো প্রশ্নের ঝড়, ওয়েম্বলিতে পারবে তো প্রিয় দল ট্রফি জিততে? কাপ শেষ পর্যন্ত যাবে তো রোমে? দিনের শেষে হাসছেন ইটালির কোচ রবার্তো ম্যানচিনি। দীঘল চেহারার গোলকিপার ডোনারুমার হাত ধরেই স্বপ্নপূরণ ৫৬ বছর বয়সি কোচের। ৫৩ বছর পর ইউরো (Euro 2020) কাপ জিতল ইটালি। অন্যদিকে এবারও ভাগ্য সহায় হল না ইংল্যান্ডের। ঘরের মাঠে পেনাল্টি শুট আউটে তিন জন তারকা গোল করতে না পারায় হৃদয় ভাঙল গ্যারেথ সাউথগেটের। টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে ম্যাচ জিতে নিল ‘আজুরি’রা্।
ইংল্যান্ড (England) এর আগে কখনওই ইউরো কাপের ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি। এবার সাউথগেটের ছেলেরা স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন দেশবাসীকে। অন্যদিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ইটালির (Italy) ফুটবলকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ম্যানচিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ইটালি। একাধিক তারকা জুতো জোড়া তুলে রেখেছেন। এরকম এক কঠিন সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ম্যানচিনি। এবারের টুর্নামেন্টে দামামা বাজিয়েই শুরু করে ইটালি। ফাইনালের বল গড়ানোর আগে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড ও ইতালির ফাইনাল রক্তের গতি বাড়িয়ে দেবে। হলও তাই। খেলার দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে লড়াই করে ফিরল ইটালি। তার পরে কোনও দলই আর গোলের দরজা খুলতে না পারায় ম্যাচ যায় এক্সট্রা টাইমে। সেখানেও গোল হয়নি। পেনাল্টি শুট আউটে ইটালি তিন-তিনটি গোল করলেও ইংল্যান্ড দু’টির বেশি গোল করতে পারেনি। টাইব্রেকারের কথা মাথায় রেখেই সাউথগেট মাঠে পাঠিয়েছিলেন স্যাঞ্চো এবং মার্কাস র্যাশফোর্ডকে। পেনাল্টি থেকে তাঁরা দু’জনেই গোল করতে ব্যর্থ হন। গোল করতে পারেননি সাকাও। টাইব্রেকারের সময়ে ইটালির বারের নীচে ডোনারুমার ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে ওঠে। অথচ ম্যাচটার পরিণতি যে এমন হবে, তা কিন্তু আগে বোঝা যায়নি।
[আরও পড়ুন: ডি’মারিয়ার গোলে স্বপ্নপূরণ মেসির, ব্রাজিলকে হারিয়ে Copa America চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা]
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে ইংল্যান্ডের আক্রমণ মাঠের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরিয়ে দেন অধিনায়ক হ্যারি কেন। ডান দিক থেকে কিয়েরান ট্রিপিয়ারের ক্রস খুঁজে নেয় লুক শকে। তাঁকে তখন কেউ মার্ক করছিলেন না। বাঁ পায়ের শটে জাল কাঁপান লুক শ। ইউরোর ফাইনালের ইতিহাসে এটাই দ্রুততম গোল।
গোলের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সময় লেগে যায় ইটালির। প্রথম ১৫ মিনিট ইংল্যান্ডের আক্রমণের দাপট চলছিল। সেই দাপট সামলে ধীরে ধীরে নিজেদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে অসংখ্য পাস খেলছিলেন কিয়েলিনিরা। কিন্তু ইংল্যান্ডের রক্ষণ প্রথমার্ধে ভাঙা সম্ভবই হয়নি। শুরুতেই গোল পেয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডও নিজেদের গোলের দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রথমার্ধের শেষের দিকে দূর থেকে গোল লক্ষ্য করে শটও নেয় ইটালি। তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তখনই বোঝা গিয়েছিল প্ল্যান এ ব্যর্থ হওয়ায় প্ল্যান বি তৈরি নেই ম্যানচিনির দলের।
সবাই ধরেই নিয়েছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে ইটালি। সাজঘরে নিশ্চয় ম্যানচিনি এমন কিছু পেপ টক দেবেন, যাতে মাঠে নেমে আগুন ধরান ইনসিনিয়ে-কিয়েসারা। সেটাই দেখা গেল। খেলার ৬২ মিনিটে কিয়েসার শট শরীর ছুড়ে বাঁচান পিকফোর্ড। ৬৭ মিনিটে ম্যাচে ফেরে ইটালি। কর্নার থেকে বোনুচ্চি গোল করে যান। ক্রমাগত চেষ্টার ফল পান ম্যানচিনির ছেলেরা। তার পরে কোনও দলই আর গোল করতে পারেনি। ম্যাচ যায় এক্সট্রা টাইমে। সেখানেও চলে মরিয়া লড়াই। গোললাইন থেকে পেনাল্টি স্পট-পৃথিবীর রহস্যময় সরণী। আর এই সরণীতেই পথ হারাল ইংল্যান্ড। ট্রফি নিয়ে ম্যানচিনিরা চললেন রোমে।