দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রথম ইনিংস: ৫৫ (সিরাজ ৬/১৫, মুকেশ ২/২, বুমরাহ ২/২৫)
ভারত, প্রথম ইনিংস: ১৫৩ (বিরাট ৪৬, রোহিত ৩৯, রাবাদা ৩/৩৮, লুঙ্গি এনগিডি ৩/৩০)
দক্ষিণ আফ্রিকা, দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭৬ (মার্করাম ১০৬, বুমরাহ ৬/৬১, মুকেশ ২/৫৬)
ভারত, দ্বিতীয় ইনিংস: ৮০/৩ (যশস্বী ২৮, রোহিত ১৭*, বিরাট ১২, শ্রেয়স ৪*)
ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯৯২ থেকে ২০২৪। কেটে গেল ৩২ বছর। দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) মাটিতে ভারতের টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন থেকে গেল অধরাই। তবে তাতে কি! এবারের টেস্ট সিরিজের সমতা ফেরানোও অনেক বড় কৃতিত্ব। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে বক্সিং ডে টেস্টে হারের পর, কেপটাউনের নিউল্যান্ডসের বাইশ গজে দাপুটে প্রত্যাবর্তন। তাও আবার এমন একটা স্টেডিয়ামে, যেখানে টিম ইন্ডিয়া (Team India) জয়ের মুখ দেখেনি।
সৌজন্যে মহম্মদ সিরাজ (Mohammmed Siraj) ও জশপ্রীত বুমরাহর (Jasprit Bumrah) আগুনে জোরে বোলিং। এবং অবশ্যই প্রথম ইনিংসে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) লড়াকু ৪৬ রান। এই ছোট ছোট সাফল্যের জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে টেস্ট সিরিজ ড্র করল ভারত। এবং সেইজন্য জলে গেল এইডেন মার্করামের (Aiden Markram) শতরান।
মাত্র ৭৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই বাইশ গজে ঝড় তুলতে শুরু করে দেন যশস্বী জসওয়াল (Yashasvi Jaiswal)। তাঁর সঙ্গী ছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। আগে আগুনে পেস বোলিং এবং এর পর দুই ওপেনারের দাপুটে ব্যাটিং মাত্র দেড় দিনেই দলকে টেস্ট জয়ের কাছে এনে দিয়েছিল। যদিও যশস্বী ২৮ রানে আউট হন। কিছুক্ষণ পর ব্যক্তিগত ১০ রানে ফিরে যান শুভমান। শেষ মুহূর্তে বিরাট আউট হন ১২ রানে। যদিও শ্রেয়স আইয়ারকে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন রোহিত। রোহিত ১৭ ও শ্রেয়স ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ হারের হতাশা কাটিয়ে বাইশ গজে লড়াকু বিরাট, কুর্নিশ প্রাক্তন তারকার]
দ্বিতীয় ইনিংসে মার্করাম একা লড়াই করে ১০৩ বলে ১০৬ রান করেছিলেন। তবে এতে লাভ হল না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাদের দেশে বরাবরই ভালো পারফরম্যান্স করেন বুমরাহ। কেপটাউন আরও বিশেষ তাঁর কাছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কেপটাউনেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল বুমরাহর। তাঁর প্রথম শিকার ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ১টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি উইকেট নিয়েছিলেন বুমরাহ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে সিরাজের (৬/১৫) আগুনে বোলিং দেখা গিয়েছিল। আর এবার প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে অনবদ্য পারফর্ম করলেন বুমরাহ। নিলেন ৬১ রানে ৬ উইকেট টিম ইন্ডিয়ার তারকা পেসার।
কেপটাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বুমরাহ ৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ২টি উইকেট। বৃহস্পতিবার কেপটাউন টেস্টে প্রথম সেশনে ৪টি উইকেট তুলে নিতেই বুমরাহর ফাইফার পূর্ণ হয়। কারণ এই টেস্টের প্রথম দিন তিনি ত্রিস্টান স্টাবসের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। আজ এক এক করে তিনি তুলে নেন ডেভিড বেডিংহ্যাম (১১), কাইল ভারানে (৯), মার্কো জ্যানসেন (১১) ও কেশব মহারাজের (৩) উইকেট।
প্রোটিয়াদের মাটিতে এই নিয়ে তৃতীয় বার ৫ উইকেট নিয়ে বুমরাহ ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার জাভাগাল শ্রীনাথের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছেন। ভারতীয় বোলার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শ্রীনাথেরও ৩ বার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। কেরিয়ারের ৩২তম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন বুমরাহ। তাঁর ঝুলি ভরেছে টেস্টে ১৩৯টি উইকেটে। এই নিয়ে ন’বার টেস্টে ফাইফার নিলেন বুমরাহ। প্রথম সেশনেই গুটিয়ে গেল প্রোটিয়ারা।
কেপটাউন টেস্টের প্রথম দিনের শেষে এইডেন মার্করাম ছিলেন ৩৬ রানে। দ্বিতীয় দিন ভারতের পেস বোলারদের বিরুদ্ধে একা লড়াও করে তিনি শতরান পূর্ণ করেন। শেষ পর্যন্ত থামলেন ১০৬ রানে। বুমরাহ ও মুকেশের দাপটে শেষ অবধি ১৭৬ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে ভারতের টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৭৯ রান। সেই রান তুলে সিরিজে সমতা ফেরাতে ভারতকে একেবারেই বেগ পেতে হল না।
১৯৯২-৯৩ মরশুম থেকে ২০২৩-২৪। রামধনুর দেশে গত ৩২ বছরে ভারতের টেস্ট জয়ের সংখ্যা মাত্র ৫। এর মধ্যে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে ২০০৬-০৭ মরশুমে প্রথমবার টেস্ট জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। ২০১০-১১ মরশুমে মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বে ১-১ ফলাফলে সিরিজ শেষ করেছিল ভারত। এর পর দুবার বিরাটের অধিনায়কত্বে এসেছিল জোড়া জয়। ২০১৭-১৮ মরশুমে টেস্ট জেতার পর ২০২১-২২ সফরে ফের তাঁর নেতৃত্বে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল দল। এবার অনেকেই আশা করেছিলেন প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়বে ভারত। তবে সেই স্বপ্ন সত্যি হল না। টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ ফলাফলে শেষ করার পর, একদিনের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। আর এবার টেস্ট সিরিজের ফলাফল দাঁড়াল ১-১। সেই স্মৃতি নিয়েই দেশে ফিরে আসবে ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড।